ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে হঠাৎ করেই চুরি ডাকাতির ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। গেল এক মাসের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এসব চুরি-ডাকাতির ঘটনায় থানায় পুলিশ আটক বা খোয়া যাওয়া মালামাল উদ্ধার করতে পারেনি। উল্টো ভুক্তভোগিরা থানায় সহযোগীতার জন্য গিয়ে নানা রকম হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। যার ফলে জন মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে।
গত ৪ মার্চ দিবাগত রাত ৩ টার দিকে আড়পাড়া বিহারিমোড় সংলগ্ন কাছারি সড়কের বটতলা নামক স্থানে একটি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এদিন রাতে কালীগঞ্জের দুই ছগল ব্যবসায়ী পৌরসভার শিবনগর এলাকার মতিয়ার বিশ্বাসের ছেলে রাজীব বিশ্বাস এবং একই এলাকার আহাদ আলীর ছেলে মোহাম্মদ মিলন চট্টগ্রাম থেকে কালীগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে নেমে রিকশা নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। বিহারি মোড় পার হয়ে রিকশা ঘটনাস্থল বটতলা নামক স্থানে পৌঁছালে একদল ডাকাত একটি মাইক্রোযোগে পেছন থেকে এসে তাদের গতি রোধ করে। এ সময় রিকশাটির এক চাকা পাশের ড্রেনের মধ্যে ঢুকে যায় এবং আরহী রাজীব ও মিলন রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে। সাথে সাথেই মাইক্রোবাস থেকে ৩-৪ জন অস্ত্রধারী ডাকাত তাদের কাাছে তাকা ১২ লাখ টাকাসহ হ্যান্ডব্যাগটি ছিনিয়ে নেয়। ডাকাতির এ ঘটনায় রাজীব বিশ্বাস বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এর আগে ১১ জানুয়ারী গভীর রাতে তৈলকূপ গ্রামের মৃত শাহাজান শেখের ছেলে আসাদুলের ১০০ সিসি মোটরসাইকেল ছিনতাই করে নেয়। একই দিন দুলালমুন্দিয়া গ্রামের মুক্তার হোসেনের ছেলে আসলাম হোসেনের (৪২) কাছ তেকে ১০০ সিসি হিরো হোন্ডা মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয়। একই রাতে কালীগঞ্জ-নলডাঙ্গা রাস্তার বাঁকা ব্রিজ নামক স্থানে দুটি ডাকাতরা দুটি মটর সাইকেল কেড়ে নেয়।
১৯ ফেব্রয়ারী রাত ১০ টার দিকে কালীগঞ্জ পৌরসভার সুগার মিলের পিছনের বাবরা রাস্তায় রশি দিয়ে পথ রোধ করে তিন আরোহির কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন ও একটি এফ জেড ১৫০ সিসি মোটরসাইকেল ছিনিয়ে নেয়। আরোহীর সবাই কলেজ শিক্ষার্থী। এ ঘটনার মোটর সাইকেলের মালিক এমডি সাইদ আফ্রিদি বাদী হয়ে ২০ ফেব্রয়ারী থানায় মামলা দায়ের করেন।
এমডি সাইদ আফ্রিদি জানান, প্রথমে থানা পুলিশ মোটর সাইকেল ডাকাতির মামলা নিতে না চাইলেও পরিবর্তিতে বিভিন্ন মহলের চাপে ছিনতাই মাললা রেকর্ড করেন। চোখের আড়াল হলেই মোটরসাইকেল, বাই সাইকেল, ইজিবাইক, ভ্যান, মোবাইলসহ বিভিন্ন মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে। এ ছাড়া রাস্তায় গতিপথ রোধ করে মোটরসাইকেল, রিক্সা ও ট্রাকে ঘটছে ডাকাতির ঘটনাও। জানুয়ারী ও ফেব্রয়ারী মাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ডজন খানেক চুরি ও ডাকাতি ঘটনা ঘটেছে। আর এসব চুরি-ডাকাতির ঘটনায় ভূক্ত-ভূগীরা থানায় অভিযোগ করলেও প্রকৃত অপরাধী কাউকে আইনের আওতায় আনতে পারছেনা আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।জানা গেছে, গত ১১ জানুয়ারী গভীর রাতে তৈলকূপ গ্রামের মৃত শাহাজান শেখের ছেলে আসাদুল ইসলামের ১০০ সি.সি সাতক্ষিরা হ ১৩-৭৭৯৯ এবং দুলাল মুন্দিয়া গ্রামের মুক্তার হোসেনের ছেলে আসলাম হোসেনের হিরো হোন্ডা ১০০ সি.সি গত ১৯ জানুয়ারী যশোর-ঝিনাইদহ মহাসড়কের কালীগঞ্জ দুলালমুন্দিয়া বাজারের সন্নিকটে পল্লী বিদ্যুতের ব্যবহৃত নিশান এল পি জি ফিলিং ষ্টেশনের তিনটি ট্রান্সফর্মার চুরি হয়। এ ঘটনায় পরের দিন দুপুর ওই ফিলিং ষ্টেশনের ম্যানেজার বাদী হয়ে কালীগঞ্জ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সি.সি. মোটর সাইকেল ডাকাতি করে। উপজেলার জামাল ইউনিয়নের বাগডাঙ্গা গ্রামে পুলিশ সুপার (এসপি) কানাই লাল সরকারে বাড়িতে বাড়ির বারান্দার গেটের তালা ভেঙ্গে বৃটিশ আলম থেকে জমিয়ে রাখা তামা,কাসা ও পিতলের তৈরী প্রায় ৬০ কেজি মালামাল লুট করে নিয়ে যায় চুরির খবর পেয়ে পরের দিন সকালে কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো : আবদুর রহিম মোল্ল্যা, জেলা পিবিআই পুলিশ ও ডিএসবির সদস্যরা ঘটনাস্থালে পরিদর্শন করেন। এছাড়াও গত ২৬শে ডিসেম্বর কালীগঞ্জ উপজেলার রায়গ্রাম বাণীকান্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সুজন সরকারের বাড়িতে চুরির ঘটনা ঘটে। এ সময় স্কুল থেকে দুইটি ল্যাপটপ, নগদ টাকা ও বাড়ি থেকে স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছে চোর চক্রের সদস্যরা। একই রাতে কোটচাঁদপুর রোডের পাতিবিলা এলাকায় গভীর রাতে ট্রাকে ডাকাতির ঘটনাও ঘটে। গত ২৯ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ পৌর এলাকার থানাপাড়া এলাকায় নিমতলা ব্রীজ সংলগ্ন বিসমিল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং মোটর গ্যারেজে আনুমানিক রাত ৮ টার দিকে গ্যারেজের পেছনের জানালা ভেঙে প্রায় আড়াই লক্ষ টাকা নিয়ে যায় চোর চক্রের সদস্যরা। এ সময় চোরেরা খাটের উপর কিছু টাকা ও ১ টি শাবল, ১ টি সেনি ও ১ টি হাতুড়ি পড়ে থাকতে দেখা যায়। ডিসেম্বর’২২ শেষ সপ্তাহে তিন দিনের ব্যবধানে ৪টি চুরির ঘটনা ঘটে।কালীগঞ্জ থানার তদন্ত ওসি হরিদাশ রায় জানান, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া চুরি ও ছিনতায়ের বিষয় নিয়ে তদন্ত চলছে। আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। খুব দ্রুতই আমরা বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িতদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে পারবো।