বিশ্ববাজারে দাম কমায় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) জ্বালানি তেলের মজুত বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে। ওই লক্ষ্যে ৬ দেশ থেকে ১৮ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২১ লাখ টন জ্বালানি তেল আনা হচ্ছে। পাশাপাশি চূড়ান্ত করা হয়েছে আগামী জুনে ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল আমদানির প্রক্রিয়াও। বিপিসি চলতি বছরে জ্বালানি তেল আমদানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে মোট ৫৪ লাখ ৬০ হাজার টন। তার মধ্যে ৩৮ লাখ ৬০ হাজার টন পরিশোধিত তেল আর বাকি তেল অপরিশোধিত। আর সব তেলই সরকারি পর্যায়ে (জিটুজি) আমদানি করা হবে। ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির তার অনুমোদন দিয়েছে। বিপিসি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্থানীয় উৎস থেকে মাত্র ৮ শতাংশ জ্বালানি তেল পাওয়া যায়। চাহিদার বাকি ৯২ শতাংশই আমদানি করা হয়। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, আরব আমিরাত, কুয়েত, থাইল্যান্ড ও ভারত থেকে পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি হয়। বর্তমানে জ্বালানি তেলের মজুত সক্ষমতা মাত্র ১৩ লাখ টন। ওই পরিমাণ জ্বালানি তেল দিয়ে সর্বোচ্চ দেড় মাসের চাহিদা মেটানো সম্ভব। যদিও আপৎকালীন সময়ের জন্য দেশে অন্তত ৯০ দিনের জ্বালানি তেল মজুত থাকা প্রয়োজন। কিন্তু দেশে এখনো জ্বালানি তেল মজুত করে রাখার পর্যাপ্ত সক্ষমতা তৈরি করা যায়নি। সূত্র জানায়, দেশে জ্বালানি তেলের যেটুকু মজুত সক্ষমতা তা মূলত বিতরণগত বা বিপণনের উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা হয়েছে। কৌশলগত মজুত গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে দেশে বড় কোনো বিনিয়োগ হয়নি। বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সরবরাহ চেইন আরো বাধাগ্রস্ত হলে দেশে তীব্র জ্বালানি সঙ্কট তৈরি শঙ্কা রয়েছে। মূলত মজুত সক্ষমতা না থাকার কারণেই বাংলাদেশ বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলেও সুবিধা গ্রহণ করতে পারছে না। বর্তমানে বিপিসির মজুতকৃত জ্বালানি তেল সংশ্লিষ্ট বিপণনকারী সংস্থার প্রধান, মাঝারি ও ছোট ডিপোগুলোয় সংরক্ষণ করা হয়। আর ওই সক্ষমতার বড় একটি অংশ চট্টগ্রামে রয়েছে। বাকি সক্ষমতা নারায়ণগঞ্জ, বাগেরহাটের মোংলা, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ডিপোতে রয়েছে। সূত্র আরো জানায়, ইস্টার্ন রিফাইনারির পরিচালনাধীন দেশের বৃহত্তম জ্বালানি তেল মজুদাগারের সক্ষমতা ৫ লাখ ২ হাজার ২৯০ টন। তার বাইরে জ্বালানি তেল বিপণনকারী সংস্থা পদ্মা ও যমুনা অয়েল এবং মেঘনা পেট্রোলিয়ামের আওতাধীন ডিপোগুলোর মোট মজুত সক্ষমতা প্রায় ৮ লাখ টন। তার মধ্যে পদ্মা অয়েলের চট্টগ্রামের প্রধান ডিপোয় মজুত সক্ষমতা রয়েছে ১ লাখ ৪১ হাজার ৫৭৩ টন। কোম্পানিটির বাগেরহাটের মোংলায় ৩৫ হাজার টন ও নারায়ণগঞ্জের গোদনাইলে ৩০ হাজার ৯৩৪ টন সক্ষমতার মজুদাগার রয়েছে। যমুনা অয়েলের চট্টগ্রামের প্রধান ডিপোয় ৮২ হাজার ২৪০ টন এবং মোংলায় ২৯ হাজার ৬৩০ টন মজুত সক্ষমতা রয়েছে। আর মেঘনা পেট্রোলিয়ামের চট্টগ্রামের প্রধান ডিপোয় ১ লাখ ১৭ হাজার ৯৭৪ টন এবং মোংলায় ২৭ হাজার ৯৭২ টন মজুত সক্ষমতা আছে। তার বাইরে বিপিসির অধীন স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল লিমিটেডের (এসএওসিএল) ৩৩ হাজার ৬২৫ টন সক্ষমতার মজুদাগার রয়েছে। আর ছোট ছোট আরো কিছু ডিপোয় নানা সক্ষমতার মজুদাগার গড়ে তোলা হয়েছে। এদিকে দেশে গত অর্থবছর মোট প্রায় ৬৯ লাখ টন জ্বালানি তেল ব্যবহার হয়েছে। তার মধ্যে ৭০ শতাংশই ছিল ডিজেল আর বাকি ৩০ শতাংশ ফার্নেস অয়েল, পেট্রোল, অকটেন, কেরোসিন ও জেট ফুয়েল। পরিবহন খাতে সবচেয়ে বেশি জ্বালানি তেল লাগে। তার পরিমাণ প্রায় ৪২ লাখ ৬০ হাজার টন। যা মোট চাহিদার ৬১ দশমিক ৬১ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কৃষি খাত। গত অর্থবছর ওই খাতে ১১ লাখ ৫০ হাজার ৮৭৭ টন জ্বালানি তেল লেগেছে। যা মোট চাহিদার ১৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। তাছাড়া বিদ্যুৎ খাতে ৮ লাখ ৮৩ হাজার টন, শিল্পে ৩ লাখ ৭৯ হাজার টন জ্বালানি খরচ হয়। সেগুলো মোট চাহিদার যথাক্রমে ১২ দশমিক ৭৭ শতাংশ ও ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অন্যদিকে জ্বালানি তেলের মজুত প্রসঙ্গে বিপিসির চেয়ারম্যান এ বি এম আজাদ জানান, দেশে জ্বালানি তেলের মজুত কিছুটা কম থাকলেও তাতে উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। ৬টি দেশ থেকে জ্বালানি আমদানির করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিছু ক্রয়াদেশও দেয়া হয়েছে। আর কিছু যাচাই-বাছাইয়ের পর্যায়ে আছে। ভারত, ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন, মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে মোট ২১ লাখ টন জ্বালানি তেল আনা হবে। তার মধ্যে ২০ লাখ ৪০ হাজার টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল ও ৬০ হাজার টন ডিজেল। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন সময়ের জন্য ওই তেল কেনা হবে।