দিঘলিয়া উপজেলার পথের বাজারে ৫টি দোকানে দুঃসাহসিক চুরি সংঘটিত হয়েছে। সংঘবদ্ধ চোর চক্র ওই ৫টি দোকান থেকে নগদ অর্থ, নতুন ও পুরাতন মোবাইল ও অন্যান্য মালামালসহ ৫ লক্ষ টাকা চুরি করে নিয়ে যায়। স্থানীয় বাজার প্রতিনিধিগণ এ চুরিকে অনাকাক্সিক্ষত ও হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা বললেও ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারেরা বাজার প্রতিনিধিদের এ শান্তনার বাণীর সাথে একমত হতে পারছেন না। তাঁদের পীঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। তাঁরা নানা ক্ষোভের তীর ছুঁড়ছেন বাজার প্রতিনিধি ও বাজারে নিয়োজিত নৈশ প্রহরীদের দিকে। পাশাপাশি তাঁরা বলছেন সিসি টিভি ক্যামেরা দুর্বল ব্যবস্থাপনাকে। ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারেরাসহ অন্যান্য দোকানদারেরা এ প্রতিবেদককে জানান, এর আগেও কয়েক বার এ বাজারে একইভাবে চুরি সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু বাজার কমিটির প্রতিনিধিদের জানানোর পরও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিকার পাইনি ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারেরা।
একটি সূত্র জানিয়েছে একটি টিনকাটা চোর চক্র খালিশপুর থানার চিত্রালী বাজার এলাকা থেকে দিঘলিয়ায় ঢুকে। তাদের সাথে স্থানীয় একটি মহলের গোপন আঁতাত আছে। তাদের সহযোগিতায় তারা এলাকায় আসে এবং অপরাধ সংঘটিত করে অবাধে পালিয়ে যায়। মাঝে মাঝে ধরা পড়লেও বাজার প্রতিনিধিদের ও ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারদের কে জিডি বা অভিযোগে বাদী হবে এ ঠেলাঠেলিতে পার পেয়ে যায় অপরাধীরা। সূত্র আরো জানায় কয়েক মাস আগে একটি সংঘবদ্ধ চোর চক্র সেনহাটি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গেট সংলগ্ন ৩টি দোকানে দুর্যোগের রাতে চালার টিন কেটে নগদ টাকাসহ কয়েক লক্ষ টাকার মালামাল চুরি সংঘটিত হয়। স্থানীয় মন্ডল মিলের সামনে একটি মহল চোরদের চ্যালেঞ্জ করে আটক করল। তাদের নিকট থেকে চুরির মালামালসহ নগদ অর্থ উদ্ধার করে জনৈক ইউপি সদস্য ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে তাদের বিদায় দিয়ে ধৃত চোরদের পুলিশে না দিয়ে চোর চক্রের স্বজনদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। মনের দুঃখে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদারেরা মামলা করতে থানায় গিয়েও অজ্ঞাত কারণে মামলা না করে ফিরে আসে। সেনহাটি বাজারে একইভাবে চুরি সংঘটিত হয়েছে। অপরাধী ধরাও পড়েছে। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধার লোকের অভাবে চোরের ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি এমন কথা শুনিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দোকানদারেরা।
এদিকে সোমবার (৬ মার্চ) বিকাল ৫ টায় পথের বাজার ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে বাজার মোড়ে এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেন। বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডাঃ বিএম আলম ও ভুক্তভোগী দোকানদারগণ বাজারে অনাকাঙ্খিত অব্যাহত চুরির ঘটনা ও থানা পুলিশের উদাসিনতার ব্যাপারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এ প্রতিবাদ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খান নজরুল ইসলাম, দিঘলিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ মারুফুল ইসলাম, দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ হায়দার আলী মোড়ল, দিঘলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোল্যা আকরাম হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা এস এম গোলাম রহমান, দিঘলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মঞ্জুর হোসেন, মোল্যা আশরাফ হোসেন প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনায় ছিলেন বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম ডালিম। বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ডাঃ বিএম আলম তার বক্তব্যে বলেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অবহেলার কারণে মাদক সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে গোটা এলাকা। বাজার চুরির জন্য তিনি বাজারের পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামকে ইন্ডিকেট করে বলেন, এ বাজারে চুরির জন্য বাইরে থেকে কেউ আসেনা। যদি কেউ আসে তবে এখানের লোক সাথে জড়িত। বাজার প্রতিনিধিগণ তাদের বক্তব্যে বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা অপরাধীদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারে ব্যর্থ হলে আমরা বাজারের সকল দোকান বন্ধ করে আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করতে বাধ্য হব।
দিঘলিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ রিপন কুমার সরকার এ প্রতিবেদককে জানান, উপজেলার পথের বাজারে অব্যাহত চুরির ঘটনায় ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। খুব শীঘ্রই আমরা প্রকৃত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পারব।