বিজ্ঞানসম্মতভাবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নসহ তিস্তা নদী রক্ষায় সরকারকে কাযকর উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন রংপুর সিটি করপোরেশনের (রসিক) মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
তিনি বলেছেন, তিস্তা বাঁচানোর আন্দোলন মানে উত্তরাঞ্চল বাঁচানোর আন্দোলন। এই আন্দোলনের সাথে উত্তরের জীবনরেখা জড়িত। তিস্তাকে রক্ষা করতে না পারলে উত্তরের কৃষি, কৃষক এবং খাদ্য উৎপাদন হুমকিতে পড়বে। তিস্তা বিলীন হলে ভবিষ্যৎতে রংপুর অঞ্চল মরুভূমিতে রুপ নেবে। এই অবস্থা সৃষ্টি আগেই সরকারকে তিস্তা নদী রক্ষায় প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দে দেয়াসহ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।
শনিবার (১১ মার্চ) দুপুরে রংপুর সিটি করপোরেশনের সভাকক্ষে সর্বজনের সংহতি সভায় মেয়র এসব কথা বলেন। ‘বিজ্ঞানসম্মতভাবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়ন, তিস্তা চুক্তি সই এবং রংপুর বিভাগের বৈষম্য নিরসনের দাবিতে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ এই সভার আয়োজন করে।
মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, রংপুরের মানুষ সবকিছুতেই পিছিয়ে আছে। এখানে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি। সমউন্নয়ন নিশ্চিতে ঠিক মতো বরাদ্দ দেয়া হয় না। সারা দেশে এত মেগাপ্রকল্প হচ্ছে অথচ রংপুরে কোন মেগা প্রকল্প নেই। তিস্তা রক্ষার জন্য সরকার শুধু আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু কোনো কাজ নেই। আমরা চাই তিস্তা বাঁচাতে সরকার প্রয়োজনী অর্থ বরাদ্দ দিয়ে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাবে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী। বক্তব্য রাখেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সফিয়ার রহমান সফি, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন ও তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ, নদীসংগঠক বখতিয়ার হোসেন শিশির।
এছাড়াও বক্তব্য দেন, রংপুর কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদত হোসেন, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মোজাহার আলী, বাসদ নেতা আবদুল কুদ্দুস, গাইবান্ধা নদী আন্দোলনের কর্মী মুনশি সাজু, রাজারহাট উপজেলার চেয়ারম্যান জাহিদ ইকবাল সোহরাওয়ার্দী, কুড়িগ্রাম গণতন্ত্রী পার্টির নেতা আবদুস সালাম, মোহাম্মদ আলী, নীলফামারীর নদীকর্মী গোলাম মোস্তফা, ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা তপন কুমার, কুড়িগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য এনামুল হক, চরলোহানির নদীকর্মী মোশাররফ হোসেন, আদিতমারীর দীলিপ কুমার রায়, পীরগাছা নদীকর্মী বাবুল আক্তার, হাতীবান্ধা নদীকর্মী সাদিকুল ইসলাম প্রমুখ।
সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, জলবায়ুর অভিঘাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে রংপুরের বৈষম্য দূরীকরণের জন্য তিস্তা চুক্তি সই করা এবং বিজ্ঞানসম্মতভাবে মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। তিনি আগামী মে মাসে মহাসমাবেশের ডাক দেন।
সফিয়ার রহমান বলেন - আমরা মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন চাই। ভারতের নতুন সেচপ্রকল্প বন্ধ করতে হবে।
জাহিদ ইকবাল সোহরাওয়ার্দী বলেন - জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে গিয়ে তিস্তা ভাঙনের ভয়াবহতা অবলোকন করেছি। এই ভাঙন রোধে কাজ করা জরুরি।
শাহাদত হোসেন বলেন -সংসদ সদস্যদের দিয়ে সংসদে বিষয়টি আলোচনা করা প্রয়োজন।
আবদুল কুদ্দুস বলেন - সরকারের পররাষ্ট্রনীতি শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
অধ্যাপক মোজাহার আলী বলেন - তিস্তা চুক্তি না হওয়ার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও দায় এড়াতে পারবেন না।
অধ্যাপক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন - বর্তমানে তিস্তা সংকট সমাধান করা সবচেয়ে জনগুরুত্বপূর্ণ। তিস্তা চুক্তি করা সম্ভব না হলে আগামীতে ভারত উজানের সব নদীর পানি প্রত্যাহার করবে।
সাদিকুল ইসলাম বলেন - আমৃত্যু তিস্তা আন্দোলনের সাথে থাকতে চাই।
সভায় রংপুরের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষাবিদ ও সুধীজনেরা উপস্থিত ছিলেন। সংহতি সভা শেষে সিটি করপোরেশনের সামনে তিস্তা নদীর উজানে ভারতের সেচপ্রকল্প বৃদ্ধি করার প্রতিবাদে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।