দেশ স্বাধীন হওনের পর থেইকা নৌকায় কইরা নদী পার হইতাছি।প্রতিবার নির্বাচনের সময় হেরা(জনপ্রতিনিধরা) গলা ফাডায়া কয় আমাগো কষ্টের দিন শেষ হইবো।নদীর উপরে দিয়া ব্রীজ কইরা দিবো।কই ব্রীজতো আর অয়না।আমরাকি সরকারকে ভ্যাট, ট্যাক্সস দেই না, আমরা কি দেশের জনগন না, কেন এখানে একটা ব্রীজ বানায় না সরকার?
কথাগুলো বলছিলেন,মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার গোসাইরচর এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান(৭০) শনিবার গজারিয়া ও ইমামপুর ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ফুলদি নদীর রসুলপুর ঘাটে গেলে কথা হয় হাবিবুর রহমানের সঙ্গে।
হাবিবুর রহমান বলেন,নির্বাচনের আগে সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেয় বিভিন্ন দলের নেতারা। তবে ভোটে নির্বাচিত হওয়ার পর কেউ খোঁজ রাখে না। এলাকাবাসী জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্না দিলে শুধু আশ্বাস ছাড়া কিছুই পাননা।পাঁচ দশক ধরে হয় করে এ সেতু আর হচ্ছে না।আমরা আর কত কষ্ট কইরাই নদী পার হমু!আমাগো কষ্ট কি আর শেষ হইবো না?
রসুলপুর খেয়াঘাটে ট্রলারে পার হয়ে বিদ্যালয়ে যাচ্ছিলো গজারিয়া পাইলট মডেল হাই স্কুলের
দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাফিস ও অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী উম্মে হাবিবা।তাদের বাড়ি রসুলপুর মোল্লাবাড়ি।
নাফিস বলেন,গত পাঁচ বছর ধরে কখনো নৌকায়,কখনো ট্রলারে করে ফুলদি নদী পারাপার হয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করছি।কুয়াশা ও ঝড়-বৃষ্টির দিনে প্রায় ৪০০ মিটার চওড়া এ নদী পারাপারে জীবনের ঝুঁকি নিতে হয়।বর্ষায় কচুরি পানার জন্য ট্রলার ঠিকমত চলেনা,ঝড়-বৃষ্টিতেও বন্ধ থাকে ট্রলার। এভাবে ঠিক সময় বিদ্যালয়ে পৌছানো যায়না।আমাদের মত এমন হাজারো স্কুল, কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন এমন দুর্ভোগ নিয়ে নদী পার হচ্ছে। একটি সেতু হলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যেত।
সরেজমিনে দেখা গেছে,ফুলদি নদীর উপর সেতু না থাকায় দুটি ইঞ্জিত চালিত কাঠের নৌকা ও সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের দেওয়া একটি ফেরির মাধ্যমে যাত্রী,অটোরিকশা এবং সিএনজি রিকশা পারাপার হচ্ছে। এ দুই ধরনের বাহনে করে স্কুল,কলেজ,বিভিন্ন সরকারি অফিস-আদালতের চাকুরীজিবীরা নদীর একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাতায়াত করছে।ট্রলার গুলো যাত্রী নামানোর কয়েক মিনিটের মধ্যেই যাত্রীরা পরিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।
এ সময় স্থানীয় ও এ নৌপথে যাতায়াতকারী কমপক্ষে ১৫ জনের সঙ্গে কথা হয়।তারা জানান,গজারিয়া উপজেলার থানা,হাসপাতাল, ফায়ারসার্ভিসসহ সব সরকারি অফিস ফুলদি নদীর পূর্ব পাশে।আবার,নদীর পশ্চিম পাশের গজারিয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি উচ্চ বিদ্যালয়,মাদ্রাসা রয়েছে।এছাড়াও পূর্ব পাশের ইউনিয়নগুলোর বাসিন্দাদের মুন্সিগঞ্জ শহরে আসতে হলে ফুলদি নদী পারি দিতে হয়।প্রতিদিন মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলা ও গজারিয়া উপজেলার অন্তত ২৫-৩০ হাজার মানুষ এ নৌপথে যাতায়াত করে। এছাড়াও কুমিল্লার দাউদকান্দি ও সোনারগাঁও উপজেলার ৮-১০ টি গ্রামের মানুষ সহজে কুমিল্লা-চট্টগ্রাম যেতে ফুলদি নদী পারাপার হন।
গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে ২০০২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের যোগাযোগমন্ত্রী নাজমুল হুদা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন।২৩ বছর পার হলেও সেতু নির্মাণ শুরু হয়নি।
গজারিয়ার সোনারকান্দি এলাকার সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা মাহবুবুর রশিদ(৬৫) বলেন,গজারিয়া উপজেলাকে দুই ভাগে ভাগ করে রেখেছে ফুলদি নদী।এখানকার কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিসহ এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার মারাত্মভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। সেতুর অভাবে জনদুর্ভোগ এখন চরমে।যুবক বয়স থেকে এ নদীর উপর সেতু নির্মানের কথা শুনছি। সেতু আর হচ্ছে না। মরার আগেদেখে যেতে পারবো কিনা তাও জানিনা।মানুষ,যানবাহনের জন্য দ্রুত সেতু করা দরকার।
এ বিষয়ে গজারিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আমিরুল ইসলামের জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে একাধিকবার আমরা চিঠি চালাচালি করছি আশা করছি খুব দ্রুত এই ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস বলেন,এ নদীর উপর ৪শ মিটার সেতু ও দুইপাশে ২শ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মান করা হবে।এ জন্য বিআইডব্লিউটিএ থেকে একটি ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়েছে। ছাড়পত্র পেলে সেতুর জন্য নকশা করা হবে। সেই সঙ্গে সেতু নির্মানের প্রাথমিক কাজগুলোও চলতি অর্থ বছরের মধ্যে করা হবে। বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে বরাদ্দ পেলে ২০২৩ সালের মধ্যে সেতুর কাজ শুরু করা যেতে পারে।