অসুস্থতায় মানুষের জীবন রক্ষার্থে চিকিৎসার বিকল্প নেই। প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ চিকিৎসাসেবার দ্বারস্থ হচ্ছে এবং জীবন বাঁচাতে ঔষধেরও বিশেষ ভূমিকা যুক্ত রয়েছে এই তালিকায়। আর্থিক দিক বিবেচনা করে দেশের মানুষের একটি বড় অংশ চিকিৎসা নিয়ে থাকেন সরকারি হাসপাতালগুলোতে। তবে এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়রানি ও অব্যবস্থাপনার শিকার হতে হয় তাদের। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে অনেক সময় দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করে চিকিৎসকের কাছ পর্যন্ত পৌঁছাতে অনেক সময় সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। চলছে চিকিৎসায় গাফিলতি, তাই সঠিক চিকিৎসা সেবা পেতে বিদেশে যাচ্ছেন উচ্চবিত্তরা, তারা দেশীয় চিকিৎসায় ভরসা রাখতে পারছেন না বা সন্তুষ্ট নন বলে জানা যায়। এমনকি দেশের উন্নত চিকিৎসাসেবা সম্পর্কে সঠিকভাবে অবগতও নন অনেকে। দেশে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত সরকারি স্বাস্থ্যসেবা থাকা সত্ত্বেও বেসরকারিভাবে চিকিৎসাসেবা নিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা-আবর্জনাময় পরিবেশ, নিরাপত্তাহীনতা, চিকিৎসক-নার্সদের অবহেলা, অপ্রতুল চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ঔষধের প্রাপ্যতা প্রভৃতি বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় এলেও রোগীকে হাসপাতালে নেওয়ার অনিবার্য পরিবহন অ্যাম্বুলেন্স নিয়েও গণমাধ্যমে বিপুল আলোচনা উঠে এসেছে। এছাড়াও জরুরি এই পরিবহন ব্যবস্থায় বাসা বেঁধেছে অনিয়ম, দুর্নীতি ও সেবা হীনতা। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন, হাসপাতালের জনবলের সংকট, চিকিৎসকদের সময়ানুবর্তিতা ও দায়িত্বশীলতা, করোনা শনাক্তের রিপোর্টে দায়িত্বরতদের স্বাক্ষর না থাকা, হাসপাতালগুলোতে নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা প্রদানে হয়রানি, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে পরীক্ষার ফি নেয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ অন্যান্য অনিয়ম, জেলা সদর হাসপাতালে কর্মচারীদের সেবার বিপরীতে অনৈতিকভাবে অর্থ আদায়, হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম এবং সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষার ক্ষেত্রে রোগীদের হয়রানির অনেক অভিযোগও রয়েছে। যেসকল সরকারী বা বেসরকারি হাসপাতাল গুলো জনবান্ধব এবং গুণগত সেবা প্রদান করতে ব্যর্থ হবে সেসকল হাসপাতালের রেজিস্ট্রেশন বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়াসহ কঠোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ ছাড়া সরকারি হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবার দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠার জন্য হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত সকল কর্মকর্তাকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। হাসপাতালগুলোতে নন-কোভিড রোগীদের চিকিৎসা প্রদানে হয়রানি, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে পরীক্ষার ফি নেয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ আদায়সহ অন্যান্য অনিয়ম, জেলা সদর হাসপাতালে কর্মচারীদের সেবার বিপরীতে অনৈতিকভাবে অর্থ আদায়, হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম এবং সরকারি হাসপাতালে পরীক্ষার ক্ষেত্রে রোগীদের হয়রানি এমতাবস্থায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সরকারকে প্রয়োজনীয় ও যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। এতে করে ডলার সাশ্রয় হয়ে একদিকে দেশের অর্থনীতি যেমন উপকৃত হবে, তেমনি মানুষের ভোগান্তিও কমবে বহুলাংশে। অবশ্যই সরকারি হাসপাতালগুলোতে সুযোগ-সুবিধা ও তদারকি বাড়ানোর বিষয়ে সরকারকে অবিলম্বে ভাবতে হবে। তাহলে হয়তো সরকারি চিকিৎসকদের বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে রোগী দেখার ‘অতিপ্রবণতা’ থেকে বেরিয়ে আসবে। ফলে দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতকে ‘জনবান্ধব’ হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।