বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমেছে। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য, এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় পরিশোধের পর গত সপ্তাহে রিজার্ভ কমে হয় ৩ হাজার ১১৪ কোটি ডলার। ওইদিন আকুর ১০৫ কোটি ডলারের বিল পরিশোধ করা হয়। এর আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ২৩৩ কোটি ডলার। লক্ষণীয় যে, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে প্রথম ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। সে হিসাবে বর্তমানে গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে রয়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সবচেয়ে বেশি হয় ২০২১ সালের আগস্টে। সেই সময়ে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছিল। আমরা মনে করি, রিজার্ভ কমে ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে- এই বিষয়টি আমলে নিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করা। স্মর্তব্য যে- রিজার্ভে ধাক্কা, অর্থনৈতিক চাপণ্ড এই বিষয়গুলো এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রসঙ্গত এটাও বলা দরকার, এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) হলো, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মধ্যে আন্তঃআঞ্চলিক লেনদেন নিষ্পত্তির ব্যবস্থা। এশিয়ার নয়টি দেশের মধ্যে যেসব আমদানি-রপ্তানি হয়, আকুর মাধ্যমে দুই মাস পরপর তা নিষ্পত্তি হয়। তবে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হয়। আকুর সদস্য দেশগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ, ভারত, ইরান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, মিয়ানমার, ভুটান ও মালদ্বীপ। যদিও দেনা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় শ্রীলংকা আকু থেকে বাদ পড়েছে। এটা বিবেচনায় নেওয়া দরকার, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সবচেয়ে বেশি হয়েছিল ২০২১ সালের আগস্টে। কিন্তু একটা সময় ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পর রিজার্ভ কমতে শুরু করে। সরকারের ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি দায় মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিয়ত রিজার্ভ থেকে ডলারও বিক্রি করছে বলে জানা যায়। অন্যদিকে মার্কিন এই মুদ্রার দামও বাড়তে শুরু করে। দীর্ঘদিন ৮৫ টাকায় ডলার স্থিতিশীল থাকে, তারপর এখন তা ১০৮ টাকায় উঠেছে। যদিও আমদানিতে প্রতি ডলারের জন্য দিতে হচ্ছে গড়ে ১০৫ টাকা। আর ডলারের ওপর চাপ কমাতে ঋণপত্র খোলায় কড়াকড়ি আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। শতাধিক পণ্যে বাড়তি শুল্ক বসায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এতে ঋণপত্র খোলা কমেছে। তবে আমদানি দায় পরিশোধ কমেনি। কারণ, আগের ঋণপত্র এখন নিষ্পত্তি হচ্ছে। আবার বিদেশি ঋণ পরিশোধের চাপও আছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি। প্রসঙ্গত বলা দরকার, গত বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে রিজার্ভ থেকে ১২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ১০ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে কারণে রিজার্ভের পরিমাণ দ্রুত কমছে বলেও জানা যায়। এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে আমদানির দেনা ও বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করায় এবং রপ্তানি ও রেমিট্যান্স খাতে বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমে যাওয়ায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়েছে এমন বিষয়ও জানা গেছে। এটাও লক্ষণীয়, রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে আমদানি ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু তারপরও রিজার্ভের ওপর চাপ কমানো যাচ্ছে না। ২০২২ সালে আমদানি ব্যয় সর্বোচ্চ প্রতি মাসে প্রায় ৮৫০ কোটি ডলারে উঠেছিল। এখন তা কমে ৪২০ কোটি ডলারে নামানো হয়েছে। আমদানি কমার কারণে দেশের শিল্প ও পণ্যমূল্য খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় মানুষের ক্রয় ক্ষমতাও কমে গেছে- এসব বিষয় সামনে আসছে যা এড়ানোর সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ) কমে ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে এসেছে- এটি আমলে নিতে হবে। রিজার্ভ কমে আসা এবং অর্থনৈতিক চাপণ্ড এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবিলায় যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমনটি কাম্য।