খুলনার পাইকগাছায় মাদক বিকিনিকির রমরমা বাণিজ্য আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ছয় দিনে ৭০০পিস ইয়াবা ও ১কেজি গাঁজাসহ পুলিশ ৪জনকে গ্রেপ্তার করেছেন। মাদকের নীল ছোবল নিয়ন্ত হচ্ছে না। বরং বিভিন্ন কোঁশলে ব্যবসায়ীরা জীবন ধবংসকারী এ কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। ফোন করলেই বাড়িতে এমনকি তার গন্তব্য স্থানে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে মাদকদ্রব্য। মাদকের ভয়াল থাবায় আক্রান্ত হয়ে এলাকায় বসবাসকারী অধিকাংশ তরুণ বিপথগামী হয়ে পড়েছে। ফলে একদিকে অপরাধের প্রবণতা যেমন বাড়ছে অন্যদিকে তরুণদের একটি অংশ দিক নির্দেশনাহীন হয়ে চরম সংকটে পতিত হচ্ছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, মাদকদ্রব্যের মধ্যে সব চেয়ে বেশী চলে ফেন্সিডিল, ইয়াবা ও গাঁজা। এখন মাদক ব্যবসা চলছে ডিজিটাল স্টাইলে। মোবাইলে অর্ডার করলেই হোম ডেলিভারী দেয়া হচ্ছে মাদকদ্রব্য। এখন মোবাইল ম্যাসেজের মাধ্যমে অর্ডার করলে কয়েক মিনিটের মধ্যেই মাদক পৌঁছে যায় সেবন কারীদের হাতে। এ সুবিধা পেতে হলে আগে নাম রেজিস্ট্রেশন করতে হয় সরবরাহকারীদের মোবাইলে। নাম এন্ট্রি থাকলে ম্যাসেজ পাঠালেই হাতের নাগালে পৌঁছে যায় মাদক। অপিরিচিত কেউ ম্যাসেজ পাঠালে ওই সিম বন্ধ করে অন্য সিম সক্রিয় করা হয়। সরাসরি মোবাইলে কল করেও তাদের পাওয়া যায় না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোটরসাইকেলে এক দল তরুণ-যুবক এ হোম ডেলিভারির জমজমাট ব্যবসা করে যাচ্ছে। এ সার্ভিস নেয়া অধিকাংশ মাদকের গ্রাহকই তরুণ-যুবক। দেশের নানা প্রান্তে মাদক দ্রব্য ছড়িয়ে দিতে সীমান্তবর্তী জেলা হিসেবে উপজেলার চাঁদখালী, রাড়-লী ও কপিলমুনি ইউনিয়নকে বেছে নিয়েছে ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্ঠ একটি সূত্র জানায়, শিববাড়ী, বোয়ালীয়া ও বড়দল ব্রিজ এলাকা, রাড়-লী, লতা বাজার, কাঠামারী, সচিয়াবন্দ সাইক্লোন সেন্টার এলাকা, কপিলমুনি ব্রিজ রোড, খেয়াঘাট ঘাট, পালপাড়া রোড, বালুর মাঠ ও কলেজ লেক এসব স্থানে সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে নেশা খোরদের আনাগোনা বৃদ্ধি পেতে থাকে। আর কাশিমনগর ও প্রতাপকাটীর কয়েকটি পয়েন্টে ফেন্সিডিল, গাঁজা ও ইয়াবা মজুদ করে সেখান থেকে উল্লিখিত স্থান সমূহে নিয়ে ফেরি করে রাস্তায় কিংবা মোড়ে তা বিক্রি অথবা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। শতকরা প্রায় ৫০ ভাগই যুবকই আজ মরণ নেশায় আসক্ত কেউ বা ফেন্সিডিল কেউ বা ইয়াবা ও গাঁজাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্যের প্রতি আসক্ত। নেশার টাকা জোগাড় করতে তারা বেছে নিচ্ছে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই সহ অন্যান্য আরো অনেক অপরাধমূলক কর্মকান্ড। মাঝে মধ্যে পুলিশের অভিযানে মাদকের বড় ধরনের চালানসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক হচ্ছে। মাদকের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় তরুণ ও যুবকদের নিয়ে অভিভাবকরা উদিগ্ন। স্থানীয় প্রশাসন মাদকের সিন্ডিকেট গুলোর কাছ থেকে নিয়মিত উৎকোচ গ্রহণ করে বলে একাধিক সূত্রের অভিযোগ। ফলে অভিনব পদ্ধতির নেটওয়ার্কের রাঘববোয়ালরা এখনও রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সর্বশেষ রোববার সন্ধ্যায় ৩শ পিস ইয়াবাসহ হৃদয় গাইন ও ইব্রাহীম গাজী নামে দুই যুবককে আটক করেছে পুলিশ। হৃদয় উপজেলার গড়ইখালী গ্রামের বাবু গাইনের ছেলে ও ইব্রাহীম একই গ্রামের মঈদুল গাজীর ছেলে। গোপণ খবরের ভিত্তিতে পৌরসভার শিববাটি ব্রিজের অপরপ্রান্তে শ্মরনখালী মোড় থেকে থানা পুলিশের এসআই সুকান্ত কর্মকার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ইয়াবাসহ হাতে নাতে দু'জনকে আটক করেন। এ ব্যাপারে ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. রফিকুল ইসলাম গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় আর কেউ জড়িত আছে কিনা ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও থানায় মাদক আইনে মামলা হয়েছে। এর একদিন আগে শনিবার ৪০পিস ইয়াবাসহ রেজাউল শেখ (৪০) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেন। ঐদিন সকাল ৯ টার দিকে উপজেলার শ্রীকন্ঠপুরস্থ নিজ চিংড়ি ঘেরের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে সাতক্ষিরার আশাশুনি উপজেলার বড়দল গ্রামের লতিফ শেখের ছেলে। এ ঘটনায় এসআই সুকান্ত কর্মকার মাদক আইনে মামলা করেছেন। পুলিশ জানান ধৃত রেজাউল শেখের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে আশাশুনি থানায় মাদক আইনে মামলা রয়েছে। ৭ মার্চ ১কেজি গাঁজাসহ আ. আলীম সরদার নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেন। থানার এসআই মো. আসাদুজ্জামান সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে কাঁটাখালী অভিমুখি সড়কের মাঠামগেট এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। সে ঐ এলাকার আবদুর রাজ্জাক সরদারের ছেলে। ওসি মোঃ জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে থানায় মামলা হয়েছে যার নং-১২। তিনি আরোও বলেন আলীম এর বিরুদ্ধে থানায় আরো ২টি মাদক মামলা আছে এবং সর্বশেষ ঘটনায় সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এদিকে ইয়াবা'র বড় চালানসহ গ্রেপ্তারকৃতদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতাদের সনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি করেছেন সচেতন মহল।