আজকের শিশু আগামীর কর্ণধার,জাতির ভবিষ্যৎ কান্ডারী। তারাই দেবে জাতিকে নেতৃত্ব। তাই এই শিশুদের গড়ে তুলতে হবে আদর ও স্নেহ দিয়ে। কিন্তু দেখা যায় দেশের অধিকাংশ শিশুই বড়ো হয় বিভিন্ন নির্যাতনের মধ্যে দিয়ে। বর্তমানে দেশে শিশু নির্যাতন উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে। শারীরিক বল প্রয়োগ করে, কাউকে আঘাত করাই শারীরিক নির্যাতন। শিশুর কানমলা থেকে শুরু করে যে কোনো বড় ধরনের আঘাত এই নির্যাতনের অন্তর্ভুক্ত। যত কম বয়সে শিশুর ওপর নির্যাতন হবে, তত এর ফল মারাত্মক হবে। বর্তমানে ৫৩টি দেশ শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করে আইন করেছে। বাংলাদেশ এ তালিকায় নেই। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪৫ শতাংশেরও বেশি শিশু রয়েছে। আদর-যত্ন সঠিক দিকনির্দেশনা ও পরিপার্শ্বিক বিরূপ অবস্থার প্রভাবে অনেক শিশু-কিশোররা তাদের জীবনের লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে। এক প্রতিবেদনে দেখা যায় বাংলাদেশের ৬৯ শতাংশ অভিভাবক ভাবেন নিয়মানুবর্তিতার বিষয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের শাস্তি দেওয়াটা অনেক বেশি প্রয়োজন। দেশে শতকরা প্রায় ৭৭.১ শতাংশ শিশু বিদ্যালয়ে খারাপ ফলাফল ও অনিয়মের কারণে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়। ১৪ বছর বয়সের এ সময়টায় বাংলাদেশের প্রায় ৮২ভাগ শিশু নানান ধরনের সহিংসতার সম্মুখীন হয়। দেশের মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ কোনো না কোনো মানসিক সমস্যায় ভুগছে। দেখা যায় এদের বড় অংশই ছোটবেলায় কোনো না কোনো নির্যাতনের শিকার ছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিষিদ্ধ করে ২০১১ সালে হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন। একই বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আদেশ জারি করেছে। ২০১৩ সালের শিশু আইনের ৭০ ধারাতেও শিশুকে আঘাত বা অবহেলাসহ মানসিক বিকৃতির শিকার হলে তাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো শিশুদের প্রতি এ ধরনের নিষ্ঠুরতা বন্ধ হয়নি। শিশুরা নির্যাতনের শিকার হলে তাদের মধ্যে হীনম্মন্যতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব, অল্পতেই রেগে যাওয়াসহ বিভিন্ন প্রবণতা দেখা দেয়। তাদের মানসিক গঠন ব্যাহত হয়। মানুষিক নির্যাতনের পাশাপাশি শিশুদের প্রতি যৌন হয়রানির ঘটনা ভয়াবহ ভাবে বেড়ে গেছে। দেখা যায় নির্যাতিত শিশুরা পরবর্তী জীবনে নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যায় ভোগে। সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিশুদের যথাযথ অধিকার, শিক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অপরিহার্য। তাই শিশু নির্যাতন বন্ধে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। শিশু নির্যাতন বন্ধে নিয়মিত মনিটরিং, টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। শাস্তির বিধি অনুযায়ী নির্যাতনকারীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এ ধরনের নির্যাতন প্রতিরোধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতা তৈরি এবং সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে বাড়িতে অভিভাবকের মাধ্যমে শিশুকে মারধর ও তাদের প্রতি কঠোর ব্যবহার, পথশিশু, গৃহকর্ম এবং প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের বিষয়টিতেও গুরুত্ব দিতে হবে। সর্বপরি শিশু নির্যাতন বন্ধে কার্যকর ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। আর তাহলেই শিশু নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব হবে।