অসুস্থ হলে চিকিৎসা করা মানুষের অন্যতম একটি মৌলিক মানবিক চাহিদা। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা- এই পাঁচটি হলো মানুষের মৌলিক মানবিক চাহিদা। এই চাহিদা পূরণে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো সঙ্কটে হাবুডুবু খাচ্ছে। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চিকিৎসা হলো মানুষের একটি অত্যাবশ্যকীয় পদক্ষেপ যা ছাড়া জাঁতি কোনোভাবেই সুস্থ ও কাজে সক্রিয় থাকতে পারে না। দেশে চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মানবিকতা বড়ানো দরকার। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ মানুষ প্রাথমিক স্বাস্থ্য সুবিধার নূন্যতম সুযোগ থেকে বঞ্চিত। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৪৩ শতাংশ পরিবার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে, ধার-কর্জ করে বা নিকটাত্মীয়দের কাছ থেকে সহায়তা গ্রহণ করে এবং প্রয়োজনে চড়াসূদে ঋণ নিয়ে চিকিৎসার খরচ মেটায়। বাংলাদেশীদের তাদের মোট চিকিৎসা ব্যয়ের ৬৮.৫০ শতাংশ খরচ নিজেদেরই বহন করতে হয়। অথচ একটি কল্যাণরাষ্ট্র তার নাগরিকদের চিকিৎসাসেবা বিনামূল্যেই করে থাকে। ভারতের বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এক প্রতিবেদন অনুযায়ী গত অর্থবছরে চার লাখ ৬০ হাজার বিদেশী রোগী ভারতে চিকিৎসা নিয়েছেন, যাদের মধ্যে এক লাখ ৬৫ হাজার বাংলাদেশী যার মানে চিকিৎসা নেয়া বিদেশীদের প্রতি তিনজনের একজনই ছিলেন বাংলাদেশী। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, স্বাস্থ্য খাতে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির বরাদ্দ কমপক্ষে ৫ শতাংশ থাকা প্রয়োজন হলেও বাংলাদেশে তা শূন্য দশমিক ৯২ শতাংশ মাত্র। আমাদের দেশে রোগীর সংখ্যা বেশি, চিকিৎসার সরঞ্জামাদি ও ওষুধপত্র সীমিত, ডাক্তারসহ অন্যান্য লোকবলও সীমিত। ফলে সত্যিকারের সেবাদান আসলেই সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে দেশের ভঙ্গুর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিশাল সঙ্কটে নিপতিত। দেশের রাজধানী ঢাকা এবং বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রসহ (আইসিইউ) সাধারণ ওয়ার্ডে মারাত্মক শয্যা সঙ্কট দেখা দিয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি ২ হাজার ৬০০ শয্যার। শয্যার চেয়ে প্রায় দেড় গুণ বেশি রোগী এই হাসপাতালে ভর্তি থাকে। প্রতিদিন বহির্বিভাগে পাঁচ থেকে ছয় হাজার রোগী চিকিৎসা নেয়। সাধারণ চিকিৎসার পাশাপাশি এই হাসপাতালে অনেক বিষয়ে বিশেষায়িত সেবা দেওয়া হয়। এই হাসপাতালের জরুরি বিভাগ বছরের ৩৬৫ দিনই খোলা থাকে। জরুরি বিভাগে দিনে প্রায় এক হাজার রোগী আসে। সাধারণ মানুষের একটি ধারণা আছে, কোথাও চিকিৎসা না জুটলেও ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা পাওয়া যাবে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১ হাজার ৩৫০ শয্যার। হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন দেড় থেকে দুই হাজার মানুষ চিকিৎসা নেয়। পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালটি ৯০০ শয্যার। শয্যার চেয়ে বেশি রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকে। দৈনিক হাসপাতালের বহির্বিভাগে গড়ে তিন হাজার মানুষ এবং জরুরি বিভাগে গড়ে ৬০০ মানুষ চিকিৎসা নেয়। দেশের শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিকিৎসা মান এমন হলে সাধারণ মানুষ দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলবে। সুতরাং সরকারকে এই বিষয়ে সুনজর দিতে হবে। তাহলে দেশের সেবার মান উন্নত হবে।