গাজীপুরের কাপাসিয়ায় ‘পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচী’ নামে এক ভুয়া এনজিও গ্রাহকদের আকর্ষণীয় সুযোগ সুবিধায় ঋণ দেওয়ার নামে সঞ্চয় ও ভর্তি ফি বাবদ আদায়কৃত প্রায় অর্ধ্ব কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে।
রোববার ওই এনজিও থেকে প্রত্যাশিত ঋণের টাকা নিতে এসে শত শত গ্রাহক অফিসে তালা ঝুলতে দেখে তাদের মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে সবগুলো নম্বর বন্ধ পান। পরে তারা প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে এর প্রতিকার চেয়ে কাপাসিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলা সদরের কলেজ রোডের কাজী বাড়ি এলাকায় জনৈক বাদলের দ্বিতলা বাড়িটি ভাড়া নিয়ে চলতি মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে ‘পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচী’ নামে একটি এনজিও কার্যক্রম শুরু করে। উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও হাট- বাজারে ওই এনজিওর লোকজন বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে মৎস খামার, পোল্ট্রি খামার, ডেইরি ফার্ম, ইলেক্ট্রনিক ব্যবসা ও প্রবাসে যেতে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার প্রচারণা চালায়। মাত্র ৭ শতাংশ সুদে ১ লাখ টাকা থেকে ৪ লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার আড়াই মাস পর থেকে কিস্তি শুরু হবে এমন লোভনীয় অফার দিয়ে তারা নূন্যতম ১০ সদস্যের একটি করে দল গঠন করে। প্রতিজন সদস্যের ভর্তি ফি বাবদ ৬২০ টাকা এবং প্রতি ১ লাখ টাকা ঋণ নিতে হলে ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় বাবদ জমা দেওয়ার নিয়ম জারি করে। এভাবে তারা প্রায় ৩০ টি দল গঠন করে প্রতিটি দলের কাছ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় ও ভর্তি ফি আদায় করে। রোববার থেকে দলের প্রত্যেক সদস্যকে প্রস্তাবিত ঋণের টাকা বিতরণের আশ্বাস দেওয়া হয়। রোববার সকালে বহুল প্রত্যাশিত ঋণের টাকা নিতে এসে ওই এনজিওর প্রধান ফটকে তালা ঝুলতে দেখে তাদের সবগুলো মোবাইল ফোনে কল দিয়ে তা বন্ধ পান গ্রাহকরা।
এ সময় তারা প্রতারণার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরে তারা এর প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
উপজেলা সদরের কান্দানিয়া গ্রামের রিনা বেগম জানান, তাদের প্রতিবেশি আলম হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল গঠণকালে তিনি ওই এনজিওর বিষয়টি জানতে পারেন। মালয়েশিয়া প্রবাসী তার ছেলে মাসুম কোম্পানি থেকে পালিয়ে গিয়ে মারাত্মক বিপদে পড়ায় তিনি ২ লাখ টাকা ঋণ নিতে চান। পরে তিনি এক আত্মীয়ের মাধ্যমে সুদে বিশ হাজার টাকা এনে সঞ্চয় বাবদ তাদেরকে জমা দিয়েছিলেন।
রোববার সকালে গিয়ে তাদের না পেয়ে এখন তিনি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। একই গ্রামের সেলিনা খাতুন জানান, ওই এলাকায় একাধিক এনজিও থাকায় এবং তারা ছয় লাখ টাকা জামানত দিয়ে অফিস নিয়েছেন এবং অফিসের আসবাবপত্র ও পরিবেশ দেখে এভাবে তারা প্রতারণা করবেন কল্পনাও করতে পারেন নি। তাই ছেলেকে প্রবাসে পাঠাতে তিন লাখ টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য ত্রিশ হাজার টাকা সঞ্চয় জমা দিয়েছিলেন।
এ বিষয়ে ওই বাড়ির মালিক বাদল মিয়া জানান, চলতি মাসের শুরুতে তিনি বাড়িটি ভাড়া দিয়েছেন এবং তার সাথে এখনো ওই এনজিওর কর্মকর্তাদের বাড়ি ভাড়ার চুক্তি সম্পাদন হয় নি। এত দ্রুত তারা এমন প্রতারণা করবেন তা তিনি কল্পনাও করতে পারেন নি।
এ বিষয়ে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মোঃ সিরাজুল ইসলাম জানান, তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন একই নামের একটি নিবন্ধনধারী এনজিওর নাম ব্যবহার করে প্রতারকচক্রটি কাপাসিয়ায় এ কাজ করে ছিল।
এ কারনেই তারা তাদের সাইনবোর্ড ও অন্যান্য কাগজপত্রে কোথাও নিবন্ধণ নাম্বার ব্যবহার করেনি।
এবিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ রুহুল আমিন জানান, তাদেও নিবন্ধন আছে কি না সে বিষয়ে তিনি নিশ্চিত নন। তবে খোঁজ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের আইনগত সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন তিনি।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান জানান, বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।