রাজশাহীর পলান সরকারের পর আরেক জ্ঞানের ফেরিওয়ালার সন্ধান পাওয়া গেলো গোপালগঞ্জের কোটালিপাড়া উপজেলার কলাবাড়ী ইউনিয়নের কুমারিয়া গ্রামে। তিনি একজন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক। নাম সুনীল কুমার গাঙ্গুলী। ৭৫ বছর বয়সী এ বৃদ্ধ প্রতিদিন কাঁধে ঝোলা ভর্তি বই নিয়ে গ্রামে গ্রামে হেটে বই পৌঁছে দেন বিভিন্ন বয়সী পাঠকের কাছে। আবার আগের দেয়া বই নিজে গিয়ে ফেরত নেন এবং নতুন বই তুলে দেন। নিজের খেয়ে বনের মহিস তাড়ানোর মত সুনীল কুমার গাঙ্গুলী বই পৌঁছে দেয়া এবং ফিরত নেয়ার কাজটি করেন স্বতস্ফুর্তার সাথে। বই পড়ে পাঠক আনন্দ পেলেই তিনি তৃপ্ত। গত ১০ বছর থেকে তিনি লাগাতার ভাবে কাজটি করছেন মনের আনন্দে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুনীল কুমার গাঙ্গুলী তার অবসরে যাওয়ার পর পেনশনের টাকায় নিজ বাড়ির উঠানে একটি ছোট লাইব্রেরী গড়ে তুলেছেন। সেখানে ৬৫০ টি বই রয়েছে। লাইব্রেরীটির নাম দিয়েছে চন্দ্রিকা জ্ঞান পাঠাগার। নিজের একমাত্র পুত্রবধূর নামে লাইব্রেরীটিতে প্রতিদিন প্রচুর পাঠক বই পড়তে আসেন। সুনীল কুমার গাঙ্গুলী বৃদ্ধদের দেন ধর্মের বই, শিক্ষার্থীদের দেন মনীষীদের বই, আর ছোটদের দেন গল্পের বই। তবে যদি কেউ তাদের পছন্দের বিশেষ বই পড়তে চান, তবে তা সংগ্রহ করে পাঠকের বাড়িতে তিনি পৌঁছে দেন। সুনীল কুমার গাঙ্গুলী ছোট বেলা থেকেই বই পড়তে ভালোবাসেন। কিন্তু বই কেনার সামর্থ্য তার ছিল না। চাচাতো ভাইয়ে কাছ থেকে বই ধার নিয়ে তিনি পড়ালেখা করতেন আর মনে মনে ভাবতেন যদি কখনো সামর্থ্য হয়, তিনি একটি পাঠাগার গড়ে তুলবেন এবং অজপাড়াগায়ে বসবাসরত দরিদ্র ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন মানুষকে আলোর পথ দেখাবেন। আর বই হলো আলোকবর্তিকা। কর্ম জীবন থেকে অবসর নেওয়ার পর পেনশনের টাকা পেয়ে জ্ঞান বিতরণের জন্য গড়ে তুলেছেন চন্দ্রিকা জ্ঞান পাঠাগার। পাঠাগারটির নাম একমাত্র পুত্রবধূর নামে করার কারণ হিসেবে তিনি তার একমাত্র ছেলের পুত্রবধূর ভুয়োশী প্রশংসা করে বলেন, আমার বয়স হয়েছে কখন আছি কখন নেই। আমার নাতিরা পরবর্তীতে তার মায়ের নামে পাঠাগার দেখে এর প্রতি যত্নশীল হবে। জ্ঞানের প্রদীপকে আরও উজ্জ্বল করবে। আজকের চলমান সময়ে মানুষ যখন আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ওঠেছে, ঠিক তখনই পলান সরকার বা সুনীল কুমার গাঙ্গুলীর মতো মহৎ ব্যক্তিদের জ্ঞান বিতরণের নি:স্বার্থ উদ্যোগ নি:সন্দেহে অনুকরণীয়। বয়সের ভারে নূজ্য হয়ে পলান সরকার দুনিয়াকে বিদায় জানিয়েছেন। কিন্তু সুনীল কুমার গাঙ্গুলী এখনো বই নিয়ে পাঠকের দুয়ারে যাচ্ছেন। আমরা আশা করবো তাদের মতো অন্য কেউ যদি আগামী নাও আসেন, তবে যেন প্রতিটি গ্রামে জ্ঞানের বাতিঘর পাঠাগার গড়ে উঠে। যেখানে যুবক, বৃদ্ধ সবাই বই পড়ে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবেন। দূর হবে কুসংস্কারের কালো অধ্যায়।