বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকায় এমন কোনো দিন নেই, যেদিন ধর্ষণের খবর প্রকাশিত হয় না। প্রায় প্রতিদিনই সংগঠিত হচ্ছে ধর্ষণ কিংবা যৌন নির্যাতনের মতো ঘটনা। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত পাড়াগ্রাম, অঞ্চল কোনো জায়গায়ই নিরাপদ নয় নারী-শিশুরা। একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ঘটছেই। সাম্প্রতিককালে সবচেয়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ধর্ষণের ঘটনা। অনেক ক্ষেত্রেই ধর্ষণ শেষে নির্যাতনের শিকার নারীকে নৃশংসভাবে করা হচ্ছে হত্যা। ঘরে, বাইরে, রাস্তা-ঘাটে, যানবাহনে, কর্মক্ষেত্রে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে। শুধু ধর্ষণই নয়, রীতিমতো গণধর্ষণ হচ্ছে। অনেক সময় ধর্ষণ করার ঘটনা ধর্ষক বা তার সহযোগী কর্তৃক মোবাইলে ভিডিও করে রাখে। পরবর্তীতে ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে আবার ধর্ষণ কিংবা টাকা দাবি করা হচ্ছে। অনেকদিন ধরে দেশে যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে তা ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির অন্যতম মূল কারণ। ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের খবর যত বেশি পাওয়া যায় সে তুলনায় অপরাধীর শাস্তির দৃষ্টান্ত অত্যন্ত কম। বিচারহীনতা ও বিচারের দীর্ঘসূত্রতার সুযোগে এবং সামাজিক মূল্যবোধ নষ্ট হওয়ায় বাড়ছে ধর্ষণের ঘটনা। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হলেও তারা আবার জামিনে ছাড়া পেয়ে যায়। কিছু মামলায় নিম্ন আদালতে বিচার হলেও তা আটকে যায় উচ্চ আদালতে। আপিলের নামে বছরের পর বছর ঝুলে থাকে মামলা। ফলে এক যুগ কেটে গেলেও বিচার শেষ হয় না। এতে ধর্ষণকারীরা অবাধে ঘুরে বেড়ায়। কেউ কেউ বেরিয়ে এসে দ্বিগুণ উৎসাহে ধর্ষণের আরও ঘটনা ঘটাতে সাহস পায়। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। মানবাধিকার ও অগ্রগতির এই একুশ শতকে সামাজিক কুসংস্কার কাটিয়ে নারীরা এগিয়ে আসছিল মানুষের ভূমিকায়, আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে। কিন্তু তাদের অগ্রযাত্রায় যৌন নির্যাতন, ইভ টিজিং কিংবা ধর্ষণ বিশাল প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে যা নারী শিক্ষা ও তাদের জীবনযাত্রায় প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ধর্ষণ ঘৃণ্য অপরাধ তাই ধর্ষণের বিরুদ্ধেই সরকারকে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধন ও আধুনিকায়ন করে সঠিক ও যথাযথভাবে প্রয়োগ নিশ্চিত করা এবং বিচার দ্রুত সম্পন্ন করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। যৌন নিপীড়নের ঘটনায় মুখ বন্ধ রাখার সংস্কৃতি বাদ দিতে হবে এবং নারীদের আরো সাহসী হয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সর্বোপরি আইন প্রণয়ন ও কার্যকরে নির্যাতিতার প্রতি আন্তরিক ও ধর্ষকের প্রতি কঠোর হতে হবে। এই ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধে সবাইকেই রুখে দাঁড়াতে হবে, সামাজিকভাবে গড়ে তুলতে হবে প্রতিরোধ ও প্রতিবাদ।