শেরপুরে নিত্যপণ্যের বাজার ক্রমেই অস্থির হয়ে উঠছে। নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বগতিতে দীর্ঘশ্বাস পড়ছে ক্রেতা সাধারণের। বিশেষ করে নি¤œআয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ইফতারসহ অন্যান্য খাবার পণ্যের দাম গত ৭ থেকে ১৫ দিনের ব্যবধানে কেজিতে ২ টাকা থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ইফতারের অন্যতম খাবার প্রকার বেধে খেজুরের দাম গত রমজানের চেয়ে বেড়েছে দ্বিগুণ। এ ছাড়া আটা, ময়দা, চিনি, তেলসহ অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে লাগাতারভাবে। খুচরা দোকানিরা বলছেন, পাইকারি বাজার বাড়তি আর পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন আড়তেই মালের দাম বেড়েছে। তাই তারাও দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন।
শেরপুর জেলা শহরের অন্যতম বাজার নয়আনী বাজারের বিভিন্ন দোকানপাট ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য গত ৭ থেকে ১৫ দিন আগের বাজার দর থেকে প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ১০ টাকা। এর মধ্যে মোটা চাল গত ১৫ দিনের ব্যবধানে ৪৯ চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, ২৮ চাল ৫৬ থেকে ৬০ টাকা, নাজির সাইল ৬৬ থেকে ৭০ টাকা বেড়েছে আর চিকন চাল স্থানীয় জাতের তুলশীমালা ১০০ টাকা থেকে ১১০ টাকা। আটা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা, ময়দা ৬৬ টাকা থেকে ৭০ টাকা, মুড়ি হাফ কেজির পেকেট ৫০ থেকে ৬৫ টাকা, সয়াবিন তেল খোলাটা ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা আর প্যাকেট জাত ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, পমওয়েল খোলাটা ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা আর সুপার কোয়ালিটি ১৩৫ টাকা থেকে ১৪৫ টাকা লিটার, সরিষার তেল ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকা, ফাটা মশুর ডাল ৯০ থেকে ১০০ টাকা আর দিল্লি সুপার ১৩৫ থেকে ১৪৫ টাকা, ছোলা ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ইফতারের অন্যতম খাদ্য খেজুরের দাম এবার খোলা এবং প্যাকেটজাত উভয়ের দাম গত বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। প্রকারভেদে ৯০ টাকার খেজুর এবার ১৫০ টাকা, ২৫০ টাকার খেজুর ৩৫০ টাকা কেজি এবং বিদেশি প্যাকেটজাত খেজুর এবার ৬০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা এবং ৪০০ গ্রামের প্যাকেট ১০০ টাকা থেকে এবার হয়েছে ১৬০ টাকা। এ ছাড়া খেসারির ডাল ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা, বেসন ৮০ থেকে ৯০ টাকা, চিনি ১১০ টাকা থেকে ১১৫ টাকা কেজিতে বেড়েছে। কাঁচা তরিতরকারির মধ্যে আলু, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, কাঁচা মরিচ, লেবু, শসা, বেগুনের দাম ৪-৫ টাকা করে কেজিতে বাড়তি থাকলেও রোজা শুরুর দিন পর্যন্ত আরও বাড়তে পারে বলে খুচরা ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছে। বিশেষ করে অন্যান্য বছরের বাজারদরের ঊর্ধ্বমুখী অনুযায়ী শসা বর্তমানে ২০ থেকে ৩০ টাকা কেজি হলেও রোজার শুরুতে এটি বেড়ে ১০০ টাকা কেজি এবং লেবু বর্তমানে ১৫ টাকা থেকে ২০ টাকা হালি থাকলেও এর দামও বেড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা হওয়ার আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ।
পণ্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির বিষয়ে নয়আনী বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মিন্টু মিয়া বলেন, আমরা পাইকারী দোকান থেকেই বেশি দরে পণ্য কিনে আনছি, সেখানেই দাম বাড়লে আমাদের করার কী আছে। শহরের নয়আনী বাজারে আসা জনৈক প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক বলেন, আমাদের বেতন তো আর মাসে মাসে বাড়ে না, কিন্তু বাজারের জিনিসপত্রের দাম যেভাবে মাসে মাসে বাড়ছে তাতে আমাদের সংসার চালানোই দায় হয়ে পড়ছে। আবুল মিয়া নামে এক দিনমজুর বলেন, ‘এবারের রোজায় আর ভালো-মন্দ খাইতে পারুম না, জিনিসের যে দাম বাড়ছে তাতে পান্তা ভাত ছাড়া গতি নাই আমাদের।’
রোকসানা নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি মেসে থাকি, আমার বাড়ি ঝিনাইগাতী। প্রতি মাসেই মা-বাবা আমার খরচের টাকা বাড়িয়ে দিলেও প্রতি মাসের শেষে ওই বাড়তি টাকাও কম পড়ে যায় শুধু কাঁচাবাজার করতেই।’ তবে জেলা প্রশাসনে বাজার মনিটরিং বিভাগ জানান, তারা নিত্যপণ্যের বাজার দর নিয়ন্ত্রণ রাখতে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে যাচ্ছেন। এ ছাড়া রমজানকে সামনে রেখে বেশ সতর্ক অবস্থায় রয়েছেন প্রশাসন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি মোবাইল কোর্টে দাম বৃদ্ধি করা, মূল্য তালিকা না থাকা এবং ক্রয় রশিদ না দেখাতে পারায় বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে বলে জানান জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সানোউল মোর্শেদ।
এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, রমজানকে লক্ষ্য করে প্রতিদিন আমাদের অভিযান চলবে। এ সময় কোনো ব্যবসায়ী যদি পণ্যের অধিক মুনাফা নেয় বা নেয়ার প্রমাণ পাওয়া যায় তবে তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া আমদানিকৃত পণ্য সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করছে কি না সেটাও আমরা নিশ্চিত করবো।