মহামান্য হাইকোর্ট খুলনার পাইকগাছা পৌরসভার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মধুমিতা পার্ক পূর্বাস্থায় ফিরিয়ে দিতে নির্দেশনা দিয়েছেন। জনৈক মাদার মন্ডল তার স্বত্ব দখলীয় বাতিখালি মৌজার সাবেক ৯১ খতিয়ানের ১৭১, ১৭২ খতিয়ানের ১.০৭ একর জমি ভারত সরকারের নামে দান করেন। দানীয় জমিতে পুকুর খননের মাধ্যমে এলাকার মানুষের মিষ্টি পানির অভাব দূর হতে থাকে। ঐ পুকুরের পানি মিষ্টি হওয়ায় এলাকার লোকজন পুকুরটির নাম দেন মিষ্টি পুকুর। এরপর ১৯৮০ সালে তৎকালিন খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মিষ্টি পুকুরটির সংরক্ষণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দিয়ে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করেন। পরবর্তীতে খুলনার জেলা প্রশাসক নূরুল ইসলাম পুকুরটির প্রাচীরের মধ্যে চলাচলের জন্য চারিপাশে রাস্তা নির্মাণ, লোকজনের বসার জন্য পাকা বেঞ্চ, ঘাট সহ বিভিন্ন ফল ও ফুলের গাছ রোপণের মাধ্যমে মনোরম পরিবেশ সৃষ্টি করেন। এরপর স্থানটির নাম হয় মধুমিতা পার্ক। যা উদ্বোধন করেন তৎকালিন খুলনার জেলা প্রশাসক নূরুল ইসলাম। ঐ সময় থেকে পৌরবাসির একমাত্র চিত্তবিনোদন কেন্দ্র হয় মধুমিতা পার্ক এবং পার্কের অভ্যন্তরে থাকা পুকুরটি পৌরবাসির মিষ্টি পানির অভাব দূরীকরনের একমাত্র আঁধার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এ অবস্থায় মধুমিতা পার্ক ও মিষ্টি পুকুরের উপর কু-নজর পড়ে একশ্রেণির প্রভাবশালী, ভূমিখেকো, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও ব্যবসায়ীদের। তারা খুলনা জেলা পরিষদের অসৎ কর্মচারীদের সাথে যোগাযোগে করে পার্কের প্রাচীর ও রাস্তা ভেঙ্গে পাকা দোকানঘর নির্মাণ করে। তখন পৌরসভায় সচেতন মহল মধুমিতা পার্ক সংরক্ষণ কমিটি গঠন করে প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধন সহ কর্তৃপক্ষের কাছে পার্কটি সংরক্ষণের জন্য আবেদন-নিবেদন করতে থাকেন। ব্যার্থ হয়ে সহাকারি জর্জ আদালত পাইকগাছায় অবৈধ বন্দোবস্ত ও দখলকারিদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে একটি মামলা করেন ও নিষেধাজ্ঞা পান। অবৈধ দখলকাররা তা অমান্য করে দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসা করতে থাকেন। পরবর্তীতে পার্ক সংরক্ষণ কমিটি তৎকালিন জাতীয় সংসদের স্পীকারের সরানাপন্ন হন এবং তার পরামর্শে বিগত ২০০৫ সালে মহামান্য হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন দাখিল করেন। যার নং-৩৫৯০/০৫। মহামান্য হাইকোর্ট মামলাটির শুনানি অন্তে বিগত ২০০৫ সালের ২৪ মে মধুমিতা পার্কের অভ্যন্তরে অবৈধ নির্মাণ কাজ বন্ধ করার আদেশ দেন। দীর্ঘদিনেও সরকারি কর্মকর্তা এবং অবৈধ দখলদাররা মহামান্য হাইকোর্টের আর্দেশের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে অবৈধ স্থাপনা রেখে কেউ কেউ নিজে দোকান দিয়ে ব্যবসা করেছেন আবার কেউ কেউ অগ্রিম মোটা টাকা ভাড়া নিয়ে ভাড়া দিয়ে তাদের অবৈধ স্থাপনা সহ দখল বজায় রেখেছেন। যা মহামান্য হাইকোর্টের আর্দেশের অবমাননা ও গুরুতর অপরাধ। ওই বিষয় উল্লেখ করে মধুমিতা পার্ক সংরক্ষণ কমিটি মহামান্য হাইকোর্ট কোর্ট অব কন্টেম পিটিশন দাখিল করেন। যার নং ১০২/২২। ওই পিটিশন কয়েক দফায় সুনানি অন্তে সর্বশেষ গত ১৩ মার্চ '২৩ মহামান্য হাইকোর্ট মামলার বিবাদিদের কে আগামী ২০ দিনের মধ্যে মধুমিতা পার্কের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে মধুমিতা পার্কটিকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে পৌরবাসির মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। ঘটনার বিষয়ে মধুমিতা পার্ক সংরক্ষণ কমিটির প্রধান উপদেষ্টা জ্যৈষ্ঠ আইনজীবী অ্যাড. জিএ সবুর ও পার্ক সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি অ্যাড. এফএমএ রাজ্জাক ও অ্যাড. প্রশান্ত মন্ডল জানান, উল্লিখিত ঘটনাটি সত্য এবং অতি দ্রুত মহামান্য হাইকোর্টের আর্দেশ সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষ বাস্তবায়ন করবেন বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মমতাজ বেগম জানান, মহামান্য হাইকোর্টের আর্দেশ পাওয়া মাত্রই কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়া হবে।