চামড়া শিল্প বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান শিল্প। চামড়া শিল্প থেকে বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আসে। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দিক থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরে চামড়া শিল্পের অবস্থান ছিল চতুর্থ। পশুর মাংস বাংলাদেশের জনগণের অন্যতম প্রিয় খাদ্য। ফলে, আমাদের দেশে সারাবছর গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি পশু জবাই করা হয়। তাছাড়া প্রতিবছর এদেশে প্রচুর পরিমাণে পশু কোরবানি করা হয়। ফলে, বাংলাদেশে পশুর চামড়ার পর্যাপ্ত জোগান রয়েছে। এসব চামড়াই আমাদের দেশে চামড়া শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ রপ্তানি পণ্য হিসাবে পরিগণিত। বর্তমানে রপ্তানি খাতে চামড়ার অবদান ৯ শতাংশেরও বেশি। বাংলাদেশ থেকে পাকা চামড়ার পাশাপাশি এখন জুতা, ট্রাভেল ব্যাগ, বেল্ট, ওয়ালেট বা মানিব্যাগ বিদেশে রপ্তানি হয় ৷ এ সম্ভাবনাময় খাতকে আরও কাজে লাগিয়ে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নেয়া সম্ভব। কিন্তু রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এ সম্ভাবনা কাজে লাগছে না। সিদ্ধান্তহীনতা এবং দুর্নীতির শিকার হয়ে গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরেই এই খাত পতনশীল। প্রথমবারের মতো দেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) এ খাতে রপ্তানি হয়েছে প্রায় ১১১ কোটি ৫৫ লাখ ডলার। ২০১৩-১৪ সালে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে আয় হয় ১২৫৮ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলার। পরবর্তী তিন অর্থবছরে এ খাতের রপ্তানি আয় ছিল যথাক্রমে ১১৩০, ১১৬১ ও ১২৩৪ মিলিয়ন ডলার। ২০১৩-১৪ সাল থেকে এ খাতের আয় ১ দশমিক শূন্য ৮ থেকে ১ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ওঠানামা করেছে। এতে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের জন্য চামড়া শিল্প অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত, যা সুষ্ঠু পরিচালনা ও যথাযথ উদ্যোগের মাধ্যমে এগিয়ে নিতে পারলে জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। দেশ-বিদেশে আমাদের চামড়াজাত পণ্যের বিপুল চাহিদা থাকা সত্ত্বেও একটি মহল এ শিল্পকে ধ্বংসের জন্য উঠে পরে লেগেছে। এক ধরনের অসাধু ব্যক্তিদের কারসাজিতে দাম না থাকায় কাঁচা চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলার মতো ঘটনাও ঘটতে দেখা গেছে। দেশের চামড়া শিল্পে উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এই সম্ভাবনাময় শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের সবার দায়িত্ব। বাংলাদেশী চামড়ার মান অন্যান্য দেশের থেকে অনেক উন্নতমানের। ফলে, ইউরোপ আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। ফলে রপ্তানিতে শুল্কের হার কমিয়ে দিলে আয় বৃদ্ধি পাবে ফলে চামড়া শিল্পে বিনিয়োগ বাড়বে। বৈদেশিক মুদ্রার পাশাপাশি চামড়াশিল্প অনেক বেকার লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। সরকার কে প্রতিবছর চামড়া নিয়ে যারা সমস্যা সৃষ্টি করে তাদেরকে চিহিৃত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ব্যবসায়ীরা সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে চামড়া ক্রয় করছেন কিনা এ বিষয়েও নজরদারি করতে হবে। সরকারী উদ্যোগে আমাদের চামড়ার গুণগত মান প্রদর্শন করতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে সম্ভাবনাময় চামড়া খাত উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়।