একাত্তরে বরিশাল জেলার(তদকালিন) গৌরনদী থানা বর্তমার আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের অজ পাড়াগাঁ বাহাদুরপুর গ্রামের হরচরন পান্ডের ছেলে নরেন্দ্র নাথ পান্ডে ৩০ বছরের টকবগে যুবক। বরিশাল পলিটেকনিকেল থেকে পরিক্ষাদিয়েছিলো। উত্তর একাত্তর জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে ৭মার্চ ভাষণ ‘গ্রামে গ্রামে দূঘ গড়েতুলো, যার যাহা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা কোরতে হবে’ এই ভাষণ শুনে নরেন্দ্র নাথ পান্ডে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। দেশকে পরাধীন থেকে মুক্ত করতে হবে। লাল সবুজের পতাকার স্বাধীন বাংলাদেশ।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেন্দ্র নাথ পান্ডেবলেন, ৭১’র মহান স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় জুন মাসের প্রথমদিকে ৪ পাকিস্তান হানাদার বরিশালের (তদকালিন) গৌরনদী থানার বাকাই গ্রামে ঢোকে। আমরা সাথে স্থানীয় বিরেন্দ্র নাথ পান্ডে, পুলিন চন্দ্র ভক্ত, মনোতোষ জয়ধর সহ অনেকে মিলে ৪ পাকিস্তান হানাদারদের চারদিক দিয়ে ঘেরাউ করি। তখন পাকিস্তানি হানাদারেরা গুলি করে বাকাই গ্রামে অনিল মল্লিক নামে একজন যুবকে হত্যাকরে। অনিল মল্লিক মারা যাবার পরে আমি (নরেন্দ্র নাথ পান্ডে) ও আমার সাথে থাকা এলাকার কয়েকজন যুবকমিলে ৪ জন পাকহানাদার বাহিনীকে সেইদিন আটক করে লেজা, টেটা, রামদা, বল্লব দিয়ে কুপিয়ে তাদেরকে মেরে মাটিতে পুতে রাখি। তাদের সাথে থাকা ৪টি অস্ত্র আমরা রেখেদেই। এই খবর গৌরনদী কলেজের পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কাছে গেলে তারা বাকাইর পরিবর্তে ভুলকরে বাকাল গ্রামে ঢুকে গুলি করে মানুষহত্যা এবং সর্বপ্রথম সুরেন্দ্রনাথ চাটার্জির দালানে আগুনসহ শতশত ঘর আগুর দিয়ে পুরেদেয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেন্দ্র নাথ পান্ডে স্মৃতিচারণ করে আরো বলেন, আমার বয়স তখন ৩০ বছর। আমি বরিশাল পলিটেকনিকেল থেকে পরিক্ষাদিয়েছি। ৭১’র জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে ৭মার্চ ভাষণ ‘গ্রামে গ্রামে দূঘ গড়েতুলো, যার যাহা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা কোরতে হবে’ এই ভাষণশুনে আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। আমি তখন একজ যুবোক। জুন মাসের প্রথমদিকে বাকাই, বাহাদুরপু, মাগুরা গ্রামে ২০ জন যুবকমিলে একটি কমিটিকরি। আমরা সকলে রাত-দিন গ্রাম পাহাড়া দিতাম।
জুন মাসের প্রথম দিকে গৌরনদী থানার বাকাই গ্রামে ৪ জন পাকহানাদার বাহিনী আসলে তাদেরকে মেরে ৪টি অস্ত্র আমরা রেখেদেই। ওই অস্ত্র নিয়ে আমার কোটালিপাড়ার হেমায়েত বাহিনীর প্রধান বীর বিক্রম হেমায়েতের সাথে দেখা করি। হেমায়েত তখন সেনাবাহীনিতে চাকুরি করতেন। তিনি কিছু অস্ত্রনিয়ে আসলেন। হেমায়েত তখন কোটালিপাড়ার জয়হরেরকান্দি স্কুল মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের টেনিংশুরু করেন। আমাদের টেনিং শেষে পাকহানাদার বাহিনীর সাথে রামশিল, পয়সারহাট, কোটালিপাড়া, গৌরনদীকটস্থল যুদ্ধ করি। রামশিলে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী সাথে সমূখ যুদ্ধে হেমাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় এবং পাকিস্তান হানাদার বাহিনী পিছুহটে।
আগৈলঝাড়ায় উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রাংতা গ্রামের কেতনার বিলের পাত্তর বাড়িতে খুলনা, যশোর, কোটালিপাড়া, গৌরনদী, উজিরপুরসহ বিভিন্ন জেলা ও থানা থেকে মানুষ এসে জরোহয়। রাজাকারেরা এই সংবাদ পাকিস্তানী মিলেটারিদের জানায় পাত্তর বাড়িতে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে।
১৯৭১ সালের ১৬ মে, ১ জ্যৈস্ঠ ১৩৭৮, রোজ রোববার পাকিস্তানী মিলেটারিরা পাত্তর বাড়ির সকল ঘরে আগুন লাগিয়ে পুরে ফেলে। তখকার ধানের গোলার ধান পুরেযায় একনও তা দেখা যায়। বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া মানুষ গুলো গুলিকরে পাখির মতোমেরে তাদের লাশ জমিতে, পুকুরে, ডোবায় ফেলে রেখে যায়। লাশ পচে বাতাসগন্ধ হয়েগিয়েছিলো। কুকুরে লাশ টেনে নিয়েখেতো। শাত শত লাশের পরিচয় পাওয়া জায়নি বলে কত পরিমান মানুষ হত্যা করেছিলো আজও তার সংখ্যা জানাযায়নি। মিলেটারিরা চলে যাবারপরে মানুষ দূর থেকে মানুষ এসেগর্থ করে এক একটি গর্থে ১৫ থেকে ২০টি লাশ মাটি চাপা দিয়ে রেখেছে। আজও মাটি খুরলে মিলে ৭১’র মহান স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনীর গুলিতে নিহতদের মানবদেহের হাড় মাটি খুরতে গেলে হাড়পাযায়।
জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধকালিন রাংতার ঐতিহাসিক কেতনার বিলে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বর্বোরচিত গণহত্যায় যারা শহীদ হয়েছেন তাদের স্মরণে”পাত্তরবাড়িতে সরকারি ভাবে স্মৃতিসৌধ নির্মান করা হয়েছে। (কাজ চলমান রয়েছে) বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেন্দ্র নাথ পান্ডে ক্ষোভের সাথে বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছর পরে হলেও জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শহীদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মান করলেও এখানে যাতায়তের কোন রাস্তা তৈরিকরা হয়নি আজও। বর্ষার সময়ে এই এলাকার জনগণ ও শহীদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ দেখতে আসা দর্শনাথীদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা নৌকা।