কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষকের বিরুদ্ধে কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে গত বুধবার অভিযুক্ত শিক্ষক ও হিসাব রক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানাযায়। এই নিয়ে কলেজে এখন অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হলেন শামীমুর রহমান। অভিযুক্ত প্রভাষকের নাম রফিকুল ইসলাম। তিনি শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক।
জানাগেছে, রফিকুল ইসলাম কলেজটিতে টানা ২৩ বছর ধরে কর্মরত রয়েছেন। শিক্ষক পরিষদে তাঁর নেতৃত্বের বয়স ১৪ বছর। এই কলেজে শামীমুর রহমানের চাকরি বয়স ২৫ বছর। চলতি বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি তিনি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পান। অধ্যক্ষের কক্ষের পাশেই হিসাব রক্ষকের কক্ষ। গত সোমবার অনুমান দুপুর ১২টার দিকে রফিকুল ইসলাম হিসাব রক্ষকের কক্ষে যান। কক্ষে গিয়ে হিসাব রক্ষক আবু সাদেককে বলেন বিজ্ঞান মেলায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ করাতে গিয়ে তাঁর ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। খরচ হওয়া ১৮ হাজার টাকা এখন তিনি চান। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের স্বাক্ষর ছাড়া তাঁর পক্ষে টাকা দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানানোর পর তিনি ক্ষেপে যান এবং গালমন্দ শুরু করেন। ইস্যুটি বুঝতে পেরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিজ কক্ষে বসে হিসাব রক্ষকে উদ্দেশ্য করে বলেন, তাঁর অনুমোদন ছাড়া যেন কাউকে এক টাকাও না দেওয়া হয়। এই কথা শোনার পর রফিকুল ইসলাম আরও ক্ষেপে যান এবং একপর্যায়ে অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করে জুতা ছুঁড়ে মারেন। পরে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।
এই ঘটনায় বুধবার সকালে রফিকুল ইসলাম ও আবু সাদেককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। রফিকুল ইসলামের কারণ দর্শানোর নোটিশে উল্লেখ করা হয়, প্রথমে তিনি হিসাব রক্ষকের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হন। পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে জুতা ছুঁড়ে মারাসহ শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। কলেজ বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন। এই ধরণের কাজ সরকারি চাকরির পরিপন্থী। সুতরাং কেন আপনার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে না- এই মর্মে তিনদিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়।
হিসাব রক্ষককের নোটিশে বলা হয়, প্রথমে তাঁর কক্ষে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। কেন ঘটল- এই বিষয়ে তাঁর কাছ থেকে জবাব চাওয়া হয়। তাঁকেও তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়।
কথা হয় ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শামীমুর রহমানের সঙ্গে। প্রথমে তিনি বলেন যা হয়েছে তা অকল্পনীয়, ভাবা যায় না। টাকা উত্তোলনের নিয়ম না মেনে টাকা চাওয়া অন্যায়। বিষয়টি বুঝাতে চাওয়া ছিল অপরাধ। আমি শান্ত হতে বলার অনুরোধ করার পরও আমার উপর চড়াও হন। তিনি বলেন, আমি গত ১৯ ফেব্রুয়ারী এই দায়িত্বে আসি। অর্থের বিষয়টি পূর্বের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের আমলের কথা। সেটা তিনি জানেন না। কিন্তু না বুঝে অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম তার আঙ্গুলের মধ্যে কামড় মারে উত্তেজিত হয়ে। তিনি আরও বলেন, এটা একটা অকল্পনীয় ঘটনা বলে উল্লেখ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ঘটনার পর থেকে কলেজের অভ্যন্তরিণ পরিবেশ অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। কর্মরতদের প্রধান আলোচ্য হয়ে উঠেছে ইস্যুটি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বিজয় কুমার দেব। তিনি বলেন, যা দেখেছি, তা যেন আর দেখতে না হয়- এখন এটাই প্রধান চাওয়া।
হিসাব রক্ষক আবু সাদেকের ভাষ্য, আমি তখনই টাকা দিতে পারি, যদি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন থাকে। কিন্তু রফিক স্যার এসে আমাকে টাকা দেবার নির্দেশ দেন এবং অসদাচরণ করেন।
অভিযোগ বিষয়ে রফিকুল ইসলামের ভাষ্য, কলেজের প্রয়োজনে তিনি নিজের পকেটের টাকা খরচ করেছেন। কিন্তু প্রয়োজনের সময় পাননি। এই কারণে মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি। তবে তিনি স্বীকার করেন এই নিয়ে তাঁর মেজাজ হারানোটা ঠিক হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম হোসাইন জানান, পুরো বিষয়টি তাঁর জানা রয়েছে। আইনগত ভাবে বিষয়টি দেখা হচ্ছে।