বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সম্ভাবনাময় শিল্পগুলোর একটা হলো পর্যটন শিল্প, যা ওই দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। বিপুল সম্ভাবনাময় এ শিল্প শুধু উন্নত দেশই নয় বরং অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। প্রাচীনকাল থেকেই বিদেশীরা এ দেশের শ্যামল ভূখন্ডের প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশ ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। পর্যটনের জন্য প্রচুর সম্ভাবনাময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সমুদ্র সৈকত, উপজাতীয় সংস্কৃতি, বহু ঐতিহাসিক নিদর্শন, পাহাড়ি এলাকা ও ঘন অরণ্য এখানে রয়েছে যা একটি দেশের জন্য গর্বের বিষয়। ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও দেশ এখনো সেভাবে এই খাতে অগ্রসর হতে পারেনি। পর্যটনকেন্দ্র ও এর আশপাশের পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি এবং নিরাপত্তা এ সবকিছুই একটি দর্শনীয় স্থান পর্যটনকেন্দ্র হতে সাহায্য করে কিন্তু দেখা যায় এসবের বেশিরভাগই দর্শনীয় স্থানগুলোতে পাওয়া যায়না। যোগাযোগ ব্যবস্থার অপ্রতুল এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা ইউরোপীয়দের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টির পিছনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কারণে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্রে আগমন ঘটছে মাত্র ৪% পর্যটকের। পরিকল্পিত উপায়ে পর্যটন শিল্প গড়ে তুলতে সক্ষম হলে দক্ষিণ এশিয়ায় পর্যটনে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকবো। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ পর্যটনশিল্পে সবচেয়ে পিছিয়ে। জিডিপিতে পর্যটনশিল্পের প্রত্যক্ষ অবদান রাখা ১৭৬টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪২তম। পর্যটন খাত থেকে বর্তমানে বাংলাদেশের বার্ষিক আয় মাত্র ৭৬.১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেখানে সার্কভুক্ত অন্যান্য দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ ও পাকিস্তানের পর্যটন খাত থেকে আয় আমাদের দেশের চেয়ে বেশি। এই দেশে যেমন রয়েছে নাফাখুমের মত জলপ্রপাত তেমনি রয়েছে মাধবকুন্ড, হিমছড়ি, কিংবা লাউয়াছড়া, লালাখাল, বিছানাকান্দির মত দর্শনীয় স্থান। রয়েছে হাতিয়া, সন্দ্বীপ, মহেশখালী আর সেন্টমার্টিনের মতো দ্বীপ। রয়েছে কেওকারাডং এর মতো সুউচ্চ পাহাড়, রয়েছে রাঙামাটির ঝুলন্ত ব্রীজ। কক্সবাজারে রয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত যা ১১১ কি.মি. বিস্তৃত। দেশে ভ্রমণে বিদেশীদের আগ্রহ বাড়িয়ে তুলতে পারলে পর্যটন খাতে আরো সুদৃঢ় অবকাঠামো গড়ে উঠবে এবং এ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। জাতীয় অর্থনীতির বিকাশে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন করা ছাড়া বিকল্প নেই। পর্যটন শিল্পকে উন্নত এবং দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে পর্যটন স্পটগুলোকে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরতে হবে। এর জন্য সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রপত্রিকাকে এগিয়ে আসতে হবে। সরকারকে পর্যটন বান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও পর্যটন কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী তৈরি করতে হবে। পর্যটন এলাকা জুড়ে লোকজ সাংস্কৃতিক মেলা ও উৎসবের আয়োজন করতে হবে। বিদেশিদের জন্য যথাযথ পরিবেশ, আলাদা আবাসিক ও বিনোদনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। মিডিয়াতে দেশের দর্শনীয় স্থানগুলো সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে যাতে করে পর্যটকদের আকৃষ্ট করা যায়। এইসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা গেলে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পে নবদিগন্তের সূচনা হবে। এ খাত থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অসামান্য অবদান রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।