শব্দ সহনীয় মাত্রায় থাকলে সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে। আর শব্দ অসহনীয় মাত্রার হয়ে গেলে সেটা পরিবেশকে দূষিত করে। তখন তাকে শব্দদূষণ বলা হয়ে থাকে। শব্দদূষণ একধরনের মারাত্মক পরিবেশদূষণ। শব্দদূষণ একটি নীরব ঘাতক। দিনেদিনে ঢাকায় আশঙ্কাজনকভাবে শব্দদূষণ বেড়ে যাচ্ছে। সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি শব্দদূষণের ফলে ঢাকা এখন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ দূষণের প্রধান উৎস বিভিন্ন যানবাহনের শব্দ ও হাইড্রলিক হর্ন। যা শিশু, বয়স্ক, অসুস্থ ব্যক্তিসহ বসবাসযোগ্য নগরী ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি। শব্দদূষণের রোগী এখন ঘরে ঘরে। বিশেষ করে যারা হার্ট অ্যাটাকের রোগী তারা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে শব্দ দূষণের কারণে। এই কারণে মাথাব্যথা, কানে কম শোনাসহ নানা রোগের উদ্রেক হয়। শব্দদূষণে বিশ্বের শীর্ষ শহরগুলোর তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশের দুটি শহর। একটি রাজধানী ঢাকা এবং অন্যটি অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী শহর। বিশ্বের ৬১টি জনবহুল ও গুরুত্বপূর্ণ শহরের মধ্যে শব্দদূষণ সবচেয়ে বেশি হয় ঢাকায়। মানুষের জন্য ঘরের ভেতরে শব্দের গ্রহণযোগ্য মাত্রা ৫৫ ডেসিবল। ঘরের বাইরে বাণিজ্যিক এলাকার জন্য ৭০ ডেসিবল কিন্তু ঢাকার এ মাত্রা ১১৯ ডেসিবল ও রাজশাহীতে ১০৩ ডেসিবল যা খুবই উদ্বেগজনক। এই শব্দদূষণের প্রধান উৎস হলো যানবাহন, যানবাহনের হর্ন, মাইক, লাউড-স্পিকার, ইট ও পাথর ভাঙার মেশিন, জেনারেটর ইত্যাদি থেকে নির্গত অসহনীয় শব্দ। শব্দদূষণের ফলে ৩০ ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যার সৃষ্টি হয়। তার মধ্যে শ্রবণশক্তি হ্রাস, বধিরতা, হৃদরোগ, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা বিঘ্নিত হওয়া অন্যতম। এক গবেষণায় দেখা যায় সারা দেশে ২০ শতাংশ মানুষ বধিরতায় আক্রান্ত। আর ২০ শতাংশে ভেতর প্রায় ৩০ শতাংশই শিশু। আর যারা ট্রাফিক পুলিশ, তাদের ১১ শতাংশের শ্রবণ সমস্যা আছে। শব্দদূষণ প্রতিরোধের জন্য আইন রয়েছে। কিন্তু আইনের কঠোর প্রয়োগ নেই ফলে চাইলেও কমানো যাচ্ছেনা এই দূষণ। নিজের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে শব্দদূষণ। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা জরুরি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে সমান ভাবে কাজ করতে হবে। যেখানে-সেখানে অযথা হর্ন বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে,হাইড্রোলিক হর্ন পরিহার করতে হবে, সামাজিক অনুষ্ঠানে বেশি জোরে গান বা বাজনা বাজানো যাবেনা। আবাসিক এলাকার শেষ সীমানা থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে নির্মাণকাজের জন্য ইট বা পাথর ভাঙার মেশিন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। যানবাহনের সৃষ্ট শব্দদূষণের প্রত্যক্ষ শিকার সাধারণ জনগণ। তাই নিজ স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের নিজেদেরই হর্ন বাজানো বন্ধ করতে হবে। সরকারকে যানবাহনে ব্যবহৃত হাইড্রোলিক হর্ন আমদানি বন্ধ করতে হবে পাশাপাশি হর্ন বাজানোর শাস্তি বৃদ্ধি করতে হবে। শব্দদূষণের অপকারিতা ও ক্ষতি সম্পর্কে চালক, মালিক ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রচারপত্র, সামাজিক, ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনতামূলক তথ্য প্রচার করতে হবে। শব্দদূষণ যদি এখনি নিয়ন্ত্রণ না করা যায়, তাহলে এর ভয়াবহতা পরিমাণ আরো বেশি হবে। সরকার বা কোনো একটি সংস্থার পক্ষে এককভাবে এ সমস্যার সমাধান কঠিন। তাই সবাই মিলে শব্দদূষণ প্রতিরোধে নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করতে হবে আর তাহলেই শব্দদূষণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।