লক্ষ্মীপুরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে নিরাপদ সবজি চাষ। আর স্বল্প খরচে লাভ বেশী হওয়ায় নিরাপদ সবজি উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষকরা। এর মধ্যেই ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা ও রায়পুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ৮০জন কৃষক। স্থানীয়রা বলছেন,সেক্স ফেরোমন ফাঁদ,আঠালো ফাঁদ ও জৈব সার ব্যবহার করে সবজি উৎপাদন করে দাম ভালো পাওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে উৎপাদনও। এতে খুশি স্থানীয় সবজিচাষীরা। স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কৃষকরা বলছেন,বাজারে সিন্ডিকেট ভেঙে পাইকারি ও খুচরা দামের মধ্যে পার্থক্য কমাতে পারলে বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব বাজার তাতে উৎপাতিত পন্যের ন্যায্য দাম পাবে তাতে আগ্রহী হচে চাষাবাদে। পাশাপাশি সরকারের এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে নিত্যপণ্যের দামও কমবে এবং কৃষকও লাভবান হবেন এমনটাই প্রত্যাশা কৃষকদের।
জানাগেছে,পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় সরকারি প্রতিষ্ঠান পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)এর যৌথ অর্থায়নে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (কোডেক) পরামর্শে চলতি বছর সমন্বিত কৃষি ইউনিটের আওতায় বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে সদর উপজেলার কালিরচর গ্রামে ৪ একর, রায়পুরের চরইন্দুরিয়া ও চরবংশী গ্রামে ৩.৫একর এবং উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচীর মাধ্যমে ১.৫ একরসহ মোট ৯ একর জমিতে উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচির মাধ্যমে নিরাপদ সবজি চাষ হয়েছে। অনেকেই এ ফলন দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন ক্ষেতে।কেউ কেউ ক্ষেত থেকেই নিরাপদ সবজি কিনে আনছেন। কেউ কেউ আবার বাজার থেকে কিনে আনতে বসে থাকছেন বাজারে। নিরাপদ সবজি উৎপাদনে কোডেক ও পিকেএসএফ এর উদ্যোগ প্রশংসনীয় বলছেন ক্রেতা-বিক্রেতাসহ অনেকে। তবে কোডেক সমন্বিত কৃষি ইউনিটের প্রশংসনীয় এই উদ্যোগের ফলে কালিরচর, চরইন্দুরিয়া ও চরবংশীসহ বিভিন্ন গ্রামে চাষ হচ্ছে বিষমুক্ত ব্রকলী, ক্যাপসিকাম,রেড ক্যাভেজ, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুনসহ ইত্যাদি সবজি চাষ হচ্ছে ক্ষেতে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, সদর উপজেলার টুমচর ইউনিয়নের কালিরচর গ্রামের চারদিক নিরাপদ সবুজ সবজির খেতে ভরা। চলতি মৌসুমে ভোক্তাকে নিরাপদ শাকসবজি খাওয়ানোর সংকল্পে বিষমুক্ত সবজি চাষ করছেন কৃষকরা। শীত মৌসুম থেকে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব রাসায়নিক সার ও ক্ষতিকর বালাইনাশক ছাড়াই নিরাপদ সবজি চাষাবাদ করছেন তারা।
কৃষকরা জানান,পরিবেশ বান্ধব নিরাপদ সবজি চাষে ব্যবহার করা হয়েছে স্থাপন করা হয়েছে সবজি মাঠে মাঝে-মধ্যে সেক্সফেরোমন ফাঁদ। এই পদ্ধতিতে প্লাস্টিক বক্স ব্যবহার করা হয়েছে। যার দুপাশে তিন কোনা ফাঁক থাকে। পুরুষ পোকাকে আকৃষ্ট করতে স্ত্রী পোকার শরীর থেকে নিঃসৃত একরকম রাসায়নিক পদার্থ বা স্ত্রী পোকার গন্ধ ব্যবহার করা হয় ফাঁদে। এর আকর্ষণে পুরুষ পোকা ফাঁদের দিকে ধেয়ে আসে এবং ফাঁদে পড়ে মারা যায়। কীটপতঙ্গ দমন পদ্ধতি সেক্সফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করায় জমির ফসল নিরাপদ থাকছে।
সদর উপজেলার টুমচর ইউনিয়নের কালিরচর গ্রামের নিরাপদ সবজি চাষি নুরুল ইসলাম বলেন,কয়েক বছর আগে আমরা জমিতে কীটনাশক স্প্রে করে বিভিন্ন জাতের শাকসবজি আবাদ করেছি। তবে আমরা জানতাম না এতে ফসল বিষাক্ত হয় এবং এসব খেয়ে মানুষেরা নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতেন।
কোডেক সমন্বিত কৃষি ইউনিট থেকে জানতে পারি, কীটনাশক ব্যবহারে জমির ফসল বিষে পরিণত হয় এবং মাটির উর্বরতা শক্তি হারিয়ে ফেলে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি মানুষকে আর বিষ খাওয়াব না। বর্তমানে আমাদের গ্রামের অনেকেই নিরাপদ সবজি চাষ করছে। একই এলাকার আরেক চাষি মো: সাইফুল ইসলাম বলেন, বাজারে বিষমুক্ত সবজির দাম বেশি হওয়ায় অল্প খরচে ভালো টাকা উপার্জন সম্ভব হয়। বাজারে এই সবজির চাহিদাও বেশি।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার কোডেক সমন্বিত কৃষি ইউনিটের কৃষি কর্মকর্তা মো: কাওছার উদ্দিন বলেন, নিরাপদ সবজি চাষ করতে কালিরচর, চরইন্দুরিয়া ও চরবংশী গ্রামের কৃষকদের সংগঠিত করে জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করে নিরাপদ ও স্বাস্থ্য সম্মত সবজি চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়। নিরাপদ ফসল উৎপাদনের সুফল বুঝতে পেরে কৃষকেরা সহজেই এই পদ্ধতিতে আগ্রহী হয়ে উঠেন। তাই বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনে আমরা কৃষক গ্রুপ, উঠান বৈঠকসহ হাতে-কলমে কৃষকদেরকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকি। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে এবং ক্রেতারাও নিরাপদ সবজি পাচ্ছে।
কৃষকের উৎপাদিত এ নিরাপদ সবজি ন্যায্য মূল্যে ভোক্তা সাধারনের কাছে পৌছে দেওয়ার লক্ষ্যে জেলা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর এর সার্বিক সহযোগিতায় লক্ষ্মীপুর জেলা শহরের প্রানকেন্দ্রে নিরাপদ সবজি বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। প্রথম দিন থেকেই নিরাপদ সবজি ক্রয়ে ভোক্তাদের মধ্যে বেশ আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়। ক্রেতাদের কথা, এখানে ন্যায্যমূল্যে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি পাওয়া গেলে কেন তারা বিষযুক্ত অনিরাপদ শাকসবজি কিনে পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলবেন?
কৃষি বিপণন অধিপ্তরের জেলা বিপণন কর্মকর্তা মো:মনির হোসেন নিরাপদ সবজি উৎপাদনে কোডেক ও পিকেএসএফ এর উদ্যোগের প্রশংসা করেন। ভবিষ্যতেও এই উদ্যোগকে অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন। তিঁনি আরো বলেন, সবজিসহ কৃষিপণ্য উৎপাদনে ও বিপণনে কঠোর হচ্ছে সরকার। সরকার উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করে বাজারে নিরাপদ কৃষিপণ্য বিক্রির বিষয়েও গুরুত্ব দিচ্ছে। সিন্ডিকেট ভেঙে পাইকারি ও খুচরা দামের মধ্যে পার্থক্য কমাতে পারলে বাজার নিয়ন্ত্রণ রাখা সম্ভব। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে নিত্যপণ্যের দামও কমবে এবং কৃষকও লাভবান হবেন।