ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, অনেকেই মনে করেছিল বাংলাদেশ শ্রীলংকা হবে। কিন্তু বাংলাদেশ তা হয়নি। বাংলাদেশের অবস্থান শ্রীলংকা থেকে অনেক শক্তিশালী। করোনা অতিমারি, ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধ এবং ডলার সংকটের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিপর্যয় হলেও আমাদের খাদ্য উৎপাদন ঠিক থাকায় সেই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। তিনি বলেন, পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে পারিবারিক কলহ তৈরি হচ্ছে। এই সমস্যা নিরসনে আমরা ভূমি বণ্টননামা কার্যকর করতে যাচ্ছি। এ ছাড়া ল্যান্ড ক্রাইম ডিসপোট কমানোর জন্য আমরা আইন প্রণয়নও করতে যাচ্ছি। রোববার চট্টগ্রাম চেম্বার আয়োজিত ৩০তম চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় (সিআইটিএফ) অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সনদ ও অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আগামী বুধবার পর্যন্ত মেলা চলবে। নগরের আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য এমএ লতিফ। চেম্বার পরিচালক ও সিআইটিএফ-২০২৩ কমিটির চেয়ারম্যান একেএম আক্তার হোসেন ও কো-চেয়ারম্যান মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী (স্বপন) বক্তব্য দেন। এ সময় চেম্বার পরিচালক জহিরুল ইসলাম চৌধুরী (আলমগীর), অঞ্জন শেখর দাশ, মো. ইফতেখার ফয়সাল, এসএম তাহসিন জোনায়েদ ও তানভীর মোস্তফা চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। চট্টগ্রামের অভূতপূর্ব উন্নয়নের প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে নিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল, বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, আনোয়ারায় অর্থনৈতিক জোন, লালখান বাজার থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বিভিন্ন মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন। ফলে নান্দনিক রূপ পেয়েছে নদী-পাহাড় ও সমুদ্রবেষ্টিত চট্টগ্রাম। তিনি চট্টগ্রামে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নের পাশাপাশি ট্যুরিজম সেক্টরে আঞ্চলিক কানেকটিভিটি বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভুটান, থাইল্যান্ড, ভারত, নেপালের পর্যটক আকর্ষণ করতে চিটাগাং চেম্বারের উদ্যোগে একটি ট্যুরিজম ফেয়ার আয়োজন করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি চট্টগ্রামে স্থায়ী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা ও একটি আন্তর্জাতিকমানের বঙ্গবন্ধু কনভেনশন সেন্টার করার জন্য নগরের কাট্টলী ও সী-বিচ এলাকায় ভূমি বরাদ্দ দেওয়ার আশ্বাস দেন। এমএ লতিফ বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শক্তিশালী অর্থনীতির দেশেরও ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেছে। পৃথিবীর অন্যতম নির্ভরযোগ্য ক্রেডিট সুইস ব্যাংকও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। দেশ দেউলিয়া হওয়া নিয়ে বিভিন্ন অপপ্রচার হয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে কোভিড ও তৎপরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট সব ধরনের সংকট মোকাবেলা করে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বমন্দার মধ্যেও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল বাংলাদেশ। তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমান সরকার দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র টানেলের মাধ্যমে নদীর দুই পাড়ে শহর গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে যাচ্ছে। জাপানের সঙ্গে চিটাগাং চেম্বার যে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে তাকে কাজে লাগাতে হবে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কারিগরি ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশীদারত্বের মাধ্যমে কোরিয়া, চীন ও তাইওয়ানের মতো অনেক দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছে জাপান। এখন বাংলাদেশকে বিনিয়োগের জন্য একটি অন্যতম স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছে জাপান। তাই আমাদেরকে এই সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, চট্টগ্রাম তথা দেশের বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য সরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে চেম্বার। খেলার মাঠে মেলার পরিবর্তে রপ্তানি পণ্য প্রসারের জন্য চট্টগ্রামে পতেঙ্গা সী-বিচ ও বে-টার্মিনাল সংলগ্ন মধ্যবর্তী এলাকায় মেলার জন্য স্থায়ী ভেন্যু বরাদ্দের আহবান জানান তিনি। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরকে আরো গতিশীল করতে পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল দ্রুত চালু করা এবং বে-টার্মিনাল প্রকল্পও দ্রুত সময়ে বাস্তবায়ন করার জন্য ভূমিমন্ত্রীর প্রতি বিশেষ অনুরোধ জানান তিনি। অনুষ্ঠান শেষে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য থেকে শ্রেষ্ঠ প্যাভিলিয়ন, স্টল এবং দেশীয় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে অ্যাওয়ার্ড ও সনদ দেওয়া হয়। এবারের মেলায় প্রিমিয়ার প্যাভিলিয়ন ক্যাটাগরিতে ওয়ালটন ডিজি-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রথম, আবুল খায়ের মিল্ক প্রোডাক্টস লিমিটেড দ্বিতীয় এবং কেওয়াইটু টোন লিমিটেড তৃতীয়; স্টলগুলোর মধ্যে বিদ্যানন্দ প্রকাশনী, ড্রেস লাইন বাংলাদেশ যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও যুগ্মভাবে তৃতীয় হয়েছে হ্যাপি ডে ও প্রাণ ডেইরি। এ ছাড়া শ্রেষ্ঠ দেশীয় প্রস্তুতকারী হিসেবে শোয়েব করপোরেশন লিমিটেড সেরা নির্বাচিত হয়েছে।