নওগাঁর মহাদেবপুর থানা পুলিশ পথরোধ করে চোখে মরিচের গুড়ো ছিটিয়ে ১৪ লাখ টাকা ছিনতাইকারী আন্তঃজেলা দস্যু দলের দুই সদস্যকে আটক করেছে। এরা হলো, জয়পুরহাট জেলার কাশাবাড়িয়া এলাকার মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে রফিকুল ইসলাম (৩৮) ও তেঘরবিশা এলাকার মাহাতাব উদ্দিনের ছেলে লিমন হোসেন মিন্টু (৩৩)। সোমবার (২০ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এতথ্য জানান জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাশিদুল হক।
এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাবিনা ইয়াসমিন, মহাদেবপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়ব্রত পাল, মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেনসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, গত ১৬ মার্চ বিকেলে জেলার মহাদেবপুর উপজেলার রাইগাঁ ইউনিয়নের বেলট গ্রামের মৃত মুনসুর আলী সরদারের ছেলে আবদুল জব্বার (৫৫) পার্শ্ববর্তী পতœীতলা উপজেলা সদরের নজিপুর ইসলামি ব্যাংক থেকে ১৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা উত্তোলন করে নিজ মোটরসাইকেলযোগে বাড়ি ফিরছিলেন। তিনি মাতাজী-মহাদেবপুর পাকা সড়রেক বেলট মোড় নামক স্থানে পৌঁছলে দুই মোটরসাইকেলে আসা হেলমেট ও মাক্স পরিহিত অজ্ঞাত চারজন তার পথ রোধ করে, চোখে-মুখে মরিচের গুড়ো ছিটিয়ে, মারপিট করে, দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তার ব্যাগে ও পকেটে থাকা ১৪ লাখ ১০ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে পরদিন মহাদেবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করলে পুলিশ সুপারের নির্দেশে মহাদেবপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে মহাদেবপুর থানার ওসি একটি চৌকস তদন্ত টিম গঠন করেন। তারা বিভিন্ন রাস্তায় থাকা সিসিটিভি ফুটেজ, ব্যাংকে লেনদেনের সময়ে মোবাইল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ছিনতাইকারীদের শনাক্ত করেন। শনিবার (১৮ মার্চ) অভিযান চালিয়ে জয়পুরহাট থেকে রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেন। তার দেয়া তথ্যমতে বগুড়া থেকে লিমন হোসেনকে গ্রেপ্তার করেন। এর সাথে জরিত অন্য দুজনকেও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ সময় আসামিদের হেফাজতে থাকা নগদ দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা, ছিনতাইয়ের টাকায় কেনা একটি সোনার চেইন, এক জোড়া কানের দুল, একটি ফ্রিজ ও একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
উল্লেখ্য, মহাদেবপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়ব্রত পাল ও মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাফ্ফর হোসেন মহাদেবপুরে যোগদানের পর তাদের নেতৃত্বে গতবছর ২ নভেম্বর ক্লুলেস সড়ক ডাকাতির রহস্য উদঘাটন করে আন্তঃজেলা ডাকাতদলের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার, ২২ ডিসেম্বর পাকা গোয়ালঘরের সিঁদ কেটে গরু চুরি করে পিকআপ ভ্যানযোগে নিয়ে যাওয়া আন্তঃজেলা গরুচোর চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার, চুরি হওয়া তিনটি গরু উদ্ধার ও গরু পরিবহণের কাজে ব্যবহৃত একটি পিকআপ জব্দ, ২৭ ডিসেম্বর চুরি হওয়া তিনটি গরু উদ্ধার, ওইদিন ও এবছর ৮ জানুয়ারি বিভিন্ন উপজেলা থেকে আন্তঃজেলা বৈদ্যুতিক মিটার চোরচক্রের আট সদস্যকে গ্রেপ্তার ও মাটির নিচে পুতে রাখা অবস্থা থেকে কয়েকটি চুরি হওয়া মিটার উদ্ধার করে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় এলাকার মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন। ক্লুলেস ডাকাতির রহস্য উদঘাটনের ঘটনায় মহাদেবপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয়ব্রত পাল রাজশাহী রেঞ্জে শ্রেষ্ট কর্মকর্তা নির্বাচিত হন।