অন্যের সনদ অবৈধভাবে ব্যবহার করে জমির জাল দলিল রেজিস্ট্রি করেছেন লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা সাব রেজিস্ট্রি অফিসের সাবেক সভাপতি মোজাম্মেল হকে। ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দেয়ায় বিষয়টি জানাজানি হলে তরিঘরি করে মিমাংসা করে দলীলটি সংশোধন করা হয়। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন এটি সম্পূর্ণ বে-আইনী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এ বিষয়ে বুধবার (২৩ মার্চ) দুপুরে সাংবাদিকরা অভিযুক্ত মোজাম্মেল হকের সাথে কথা বলতে গেলে মারমুখী হয়ে তেড়ে আসেন এবং বলেন আমাদের দলিলের বিষয়ে আপনারা কি জানেন?
জানা যায়, গত ১৪ মার্চ আদিতমারী সাব রেজিস্ট্রি অফিসে তালুক দুলালী এলাকার সুনতী বালা যোগেশ চন্দ্র নামে একজনকে এক লাখ বারো হাজার টাকার বিনিময়ে সাড়ে বারো শতাংশ জমি দান করেন। যার দলীল নং ১১৩৮, মৌজা তালুক দুলালী।
দানপত্র দলীলটি দাতা-গ্রহীতার সাথে চুক্তি করে আদিতমারী সাব রেজিস্ট্রি দলীল লেখক সমিতির সাবেক সভাপতি মোজাম্মেল হক সম্পাদন করেন। কিন্তু গোপনে দলীল সম্পাদনকারীর স্থানে নিজের নাম উল্লেখ না করে শ্যামল চন্দ্র রায় নামে অপর দলীল লেখকের নাম ও সনদ নাম্বার উল্লেখ করেন। যা সম্পুর্ন বেআইনী। এছাড়াও সেখানে স্বাক্ষরের জায়গা ফাকা রেখে সাব রেজিস্ট্রারের চোখ ফাকি দিয়ে দলীলটি পার করেন তিনি।
পরবর্তী ভুক্তভোগী দলীল লেখক শ্যামল চন্দ্র বিষয়টি জানতে পেরে গত ১৯ মার্চ দলীল লেখক সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে সাংগঠনিক প্রতিকার চান। অজানা কারণে কোন ব্যবস্থা না নেওয়া হলে গতকাল বুধবার (২২ মার্চ) দুপুরে সাংবাদিকরা বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিতে গেলে জানাজানি হওয়ায় তড়িঘড়ি করে সেখানেই সমাধান করা হয়।
শ্যামল চন্দ্রকে সাব রেজিস্ট্রার অফিসে ডেকে ভয় ভীতি দেখিয়ে সমাধান করে সেই দলীলে শ্যামল চন্দ্রের স্বাক্ষর নেওয়া হয়। তবে পরবর্তীতে দলিলটি কিভাবে সমাধান করা হয়েছে তা নিয়ে মুখ খোলেননি কেউ।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী শ্যামল চন্দ্র রায় বলেন, আমার সনদ ব্যবহার করে আমাকে ফাঁসানোর জন্য অনৈতিক ভাবে জমি রেজিস্ট্রি করা হয়েছে যা আমি জানতাম না। পরে জানতে পেরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।
অভিযুক্ত দলিল লেখক মোজাম্মেল হক বলেন, আমি এরকম কিছু করিনাই। তাহলে ভুল স্বীকার করলেন কেন সে বিষয়েও কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে সাব রেজিস্ট্রি দলীল লেখক সমিতির সভাপতি আবু তালেব বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি মিমাংসা করা হয়েছে।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, সাবেক সভাপতি অন্যের সনদ ব্যবহার করে দলীল করেছিলেন। অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইলে বিষয়টি মিমাংসা করে দেওয়া হয়। এভাবে জমি দলীল আইনগত কিনা তার জবাবে তিনি বলেন, এটি বেআইনী এবং নিয়মের মধ্যে পড়েনা।
এ বিষয়ে আদিতমারীর সাব রেজিস্ট্রার রাশেদুজ্জামান বলেন, আমার কাছে কেউ কোন অভিযোগ করেনাই। আমি দেখেছি শ্যামল চন্দ্রের নামেই দলীলটি করা আছে। তড়িঘড়ি করে মিমাংসার বিষয়ে তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।
লালমনিরহাটে জেলা রেজিস্ট্রার খালিদ মোহাম্মদ বিন আসাদ বলেন, এটি কোনো ভাবেই আইন সম্মত নয়। বিষয়টি খোঁজখবর নিয়ে ব্যাবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।