নারী ছাড়া পৃথিবীতে সভ্যতার সৃষ্টি ও প্রসার হতো না। অথচ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সামাজিক, পারিবারিক ও প্রথাগত দিক দিয়ে নারীরা নির্যাতিত ও অবহেলিত। বাংলাদেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী। তাদের অবহেলিত রেখে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালন ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণের জন্য রাষ্ট্রের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। বর্তমানে নারীরা অর্থনীতি, সামাজিক, রাজনৈতিকসহ সব ক্ষেত্রে অগ্রসর হচ্ছে, দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন সামাজিক সূচকে দেশকে অগ্রসর করে নিয়ে যাচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলা থেকে শুরু করে পাহাড়ের চূড়ায় আরোহণ, খেলাধুলায় অংশগ্রহণ সব ক্ষেত্রেই নারীরা আজ দৃশ্যমান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নারী অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও বাংলাদেশে নারী ও মেয়ে শিশুর ওপর নির্যাতন, হত্যা এবং সহিংসতা বেড়েই যাচ্ছে। কিন্তু ঘটনাগুলোর কোনো সুরাহা হচ্ছে না। অপরাধীকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসাও বেশ দুরূহ হয়ে যাচ্ছে। আবার বিচারের মুখোমুখি হলেও বিভিন্ন ফাঁক গলে অপরাধী ছাড় পেয়ে যায়। ফলে অপরাধীদের পরিমাণ ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই কৈশোরে সন্তান জন্মদানের হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি ১০ জন মেয়ের মধ্যে একজন ১৫ বছর বয়সের আগেই সন্তানের জন্ম দেয়। আর প্রতি তিনজনের একজন কিশোরী ১৯ বছর বয়সের মধ্যে সন্তান জন্ম দেয় অথবা গর্ভধারণ করে। ৫১ শতাংশ নারীর বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছর বয়সের আগেই। দেশে প্রথমবার নারীনীতি আইন প্রণয়ন করা হয় ১৯৯৭ সালে, এরপর ২০০৪ ও ২০০৮ সালে তা সংশোধন করা হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালে পুনরায় নারীনীতি প্রণয়ন করা হয়। বাংলাদেশে মহিলাসমাজ লেখাপড়ায় অনেক এগিয়ে এসেছে। ফলে নারীসমাজ ধিরেধিরে আত্মনির্ভরশীল হচ্ছে। মাঠপর্যায়েও নারীরা দক্ষ প্রশাসক হিসাবে কাজ করছে। দেশে-বিদেশে শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ ক্রমেই বৃদ্ধি পাঁচ্ছে। কৃষিকাজ, তৈরি পোশাকশিল্প, নির্মাণশিল্পসহ বিভিন্ন পেশায় কর্মরত নারী দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছে। বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ, যেখানে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা ও স্পিকার নারী। এত কিছুর পরও নারী পুরুষের বৈষম্য একেবারে দূর হয়ে যায়নি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে শিক্ষা ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে হবে। রাস্ট্রের নারীর প্রতি বিদ্যমান সব ধরনের বৈষম্যমূলক কর্মকাণ্ড, রীতিনীতি, প্রথা ও চর্চা নিষিদ্ধকরণ এবং নারীর প্রতি বৈষম্য প্রদানকারী ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নারীকে উপেক্ষা নয়, তাদের যোগ্য সম্মান দিতে হবে পরিবার, সমাজ থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে। নারীদের অধিকার আদায়ে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। একমাত্র তাহলেই দেশ দুর্বার গতিতে এগিয়া যাবে।