১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের গৌরব উজ্জল স্মৃতি বহন করে চলেছে গণকবর। সারা বাংলাদেশের মতো নওগাঁয় ৬৭টি গণকবর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সংরক্ষণের অভাবে কিছু গণকবরের অস্তিত্ব ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে আর কিছু গণকবরের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে। নওগাঁর গণকবরগুলোর মধ্যে পত্নীতলা-পোরশা সীমান্তে অবস্থিত শিশা বড় ব্রীজ গণকবরটি অন্যতম। শিবপুর-পোরশা সড়কে এই গণকবরটির অবস্থান।
সরেজমিনে শিশা বড় ব্রীজ গণকবরে গিয়ে দেখা গেছে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে গণকবরটি। কর্ত্তৃপক্ষ কবর বাঁধাই করেই যেন দায়িত্ব শেষ করেছে। গণকবরের গায়ে মৃত ইমাম উদ্দীন (গণপতিপুর), মৃত ছহির মন্ডল (খরপা), মৃত গয়েশ (খরপা), মৃত আকরাম দফাদার (সরিয়াল), মৃত বছির আমিন (খরপা) নামে কয়েকজন শহীদদের নাম লিখা আছে। শিশা বাজারের প্রবীণ কয়েকজন ব্যক্তির সাথে কথা বললে তাঁরা জানান, ১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী বহু মানুষকে এই স্থানে নিয়ে এসে হত্যা করেছে। এদের কয়েকজনের নাম কবরে খোদাই করে লিখা থাকলেও অন্যদের নাম জানা যায়নি। জাতীয় দিবসে এখানে কোন কর্মসূচী পালিত হয়না বলেও তাঁরা জানান।
শিশা বড় ব্রীজ গণকবরটি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বহন করে চললেও প্রত্যন্ত এলাকায় অবস্থানের কারণে এটির খবর কেউ রাখে না। সরেজমিনে দেখা গেছে গণকবরের পশ্চিম পাড় ঘেঁষে ময়লার ভাগাড় গড়ে তোলা হয়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় কবরের ওয়ালের রং নষ্ট হয়ে গেছে। গণকবরটি দেখে এটাকে যে কেউ সাধারণ কোন কবর হিসাবে মনে করবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত গণকবরটি সংরক্ষণের উদ্যোগ না নিলে এটির অস্তিত্ব অচিরেই বিলীন হওয়ার আশংকা প্রকাশ করে এটিকে সংরক্ষণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এলাকার সচেতন মানুষ।
এ বিষয়ে পোরশা উপজেলার মুশিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হারুন অর-রশিদ বলেন, গণকবরের পাশে ময়লা না ফেলার জন্য এলাকার মানুষকে নিষেধ করা হয়েছে। অচিরেই গণকবরটি সংস্কার করা হবে। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মো. সাদেক উদ্দীন বলেন, গণকবরটি বর্তমানে কি অবস্থায় আছে সেটি আমার জানা নেই, গণকবরের স্থানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ও তা সংরক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হবে। পোরশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা আকতার বলেন, স্থানীয় বাজারের ময়লা-আবর্জনা গণকবরের পাশে না ফেলার জন্য ব্যবসায়ীদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। গণকবরের স্থানে একটি ফলক নির্মাণ এবং সেখানে প্রশাসনের উদ্যোগে কর্মসূচী গ্রহণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।