অন্যান্য সবজির তুলনায় লাউয়ের চাষ খুব সহজ ও খরচ কম। তাই লাউ চাষে ঝুঁকছেন দিঘলিয়ার চাষিরা। দিঘলিয়ার মজুদখালী নদীর তীরবর্তী এলাকাসহ লাখোহাটি, গাজীরহাট, হাজীগ্রাম, ব্রহ্মগাতী, দিঘলিয়া, নন্দনপ্রতাপ, আড়ুয়া, সুগন্ধী, দেয়াড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় লাউয়ের ব্যাপক ফলন হয়েছে। দিঘলিয়ায় খিরাই, বাঙ্গি, তরমুজ, শিম, বেগুন, কুমড়া ইত্যাদি সবজির পাশাপাশি বর্তমানে কৃষকরা লাউয়ের চাষ করছেন। মাছের ঘেরে বর্তমানে লাউ ও কচু চাষ প্রসিদ্ধ।
খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলায় গাজীরহাট, দিঘলিয়া, বারাকপুর, ও সেনহাটি ইউনিয়নের হাজীগ্রাম, ব্রহ্মগাতী, পানিগাতী, দিঘলিয়া, লাখোহাটি, গাজীরহাট, মোল্লাহাট, আমবাড়িয়া, বোয়ালিয়ারচর, দিঘলিয়া, আড়ুয়া, দেয়াড়া ও সুগন্ধী এলাকাগুলোতে ব্যাপক পরিমানে লাউয়ের চাষ করা হয়েছে। কৃষকেরা আগাম গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের জন্য ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত লাউয়ের বীজ বপন করে থাকেন। কৃষকেরা মৌসুমী গোলআলু, পটল, শিম, বেগুন, লাউ, ঢেঁড়স, ঝিঙা, চিচিংগা, টমেটো ও করলাসহ বিভিন্ন শাক-সবজির আবাদের পাশাপাশি লাউয়ের ব্যাপক চাষ করেছেন। লাউ একটা ত্রিমূখী সবজি। দিঘলিয়া উপজেলার সবজি সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে মূল্যও বেশী ও অনেক চাহিদাও রয়েছে। বর্তমানে কৃষকেরা তাদের জমির লাউ তুলে বাজারে বিক্রি করছেন। লাউ চাষ থেকে কৃষকেরা লাউয়ের পাশপাশি সবজি হিসেবে লাউয়ের আগা ও ডোগাও বিক্রি করা যায়।
দিঘলিয়া ইউনিয়নের দেয়াড়া গ্রামের সবজি চাষি মোঃ কাওসার এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার এ জমিটা কয়েক বছর ধরে পতিত ছিল। এ বছর আমি জমি প্রস্তুত করে ৬০ শতাংশ জমিতে কুমড়ার পাশাপাশি লাউয়ের চাষ করেছি। সব মিলিয়ে আমার ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি লাভবান হতে পারবো। কুমড়া গাছ থাকলে লাউয়ের ক্ষতি হতে পারে। তাই কুমড়া গাছ মেরে দিয়ে শাক-সবজি চাষের জন্য জমি তৈরি করছি। লাউ গাছ মাচানে তোলার পর গাছগুলো চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। বেশ ফলনও এসেছে। বেশ কিছু লাউ বাজারে বিক্রিও করেছি।
লাউ চাষি সুগন্ধী গ্রামের শেখ সেলিম এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের বাড়ির সামনে রাস্তার পাশের জমিগুলো অনুর্রব হওয়ায় যা চাষ করতাম কিছুই ফলন পেতাম না। কৃষি বিভাগের পরামর্শে মাচান দিয়ে লাউয়ের চাষ করেছি। শুরুতে প্রতিটা লাউ ৫০-৬০ টাকা দরে বিক্রি করতে পারলেও এখন দাম কমে ৩০-৩৫ টাকা পাইকারি দরে বিক্রি করতে পারছি। এতে খরচ কম হয়েছে এবং জৈব সারের মাধ্যমেই ভালো ফলন পেয়েছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ কিশোর আহমেদ এ প্রতিবেদককে বলেন, চলতি বছর এই উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে লাউয়ের চাষ করা হয়েছে। এ ছাড়া অপেক্ষাকৃত অনুর্বর শত একর জমিতে চাষ করা অন্যান্য ফসলের ক্ষেতে এ লাউয়ের আবাদ করা হয়েছে। এতে সব মিলিয়ে আরো অন্তত ২০ একর জমিতে লাউয়ের আবাদ হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। বাড়ির গৃহিনীরাও তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় পরিবারের চাহিদা মিটাতে ২-৪টি করে লাউয়ের গাছ রোপণ করেছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার এ প্রতিবেদককে আরো বলেন, লাউ চাষে সময়, শ্রম এবং খরচ কম হওয়ার পাশাপাশি বাজারে ভালো দামে বিক্রি করে লাভবান হতে পারছেন বলে কৃষকেরা লাউ চাষে ঝুঁকছেন। আমরা কৃষকদের মাঠ পর্যায়ে যেয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করছি।