নওগাঁর পত্নীতলায় চৌধুরী ডেইরি ফার্ম নামে একটি ফার্মে হামলা, মারধর, লুটপাট মামলার আসামী কর্ত্তৃক আদালত হতে জামিনে মুক্ত হয়ে এসে শনিবার ফার্মের মালিককে ফার্মে প্রবেশে বাধা প্রদান ও পুনরায় ফার্ম ভাংচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় শনিবার রাতেই ভুক্তভোগি ফার্মের মালিক থানায় একটি জিডি করেছেন। আসামীরা ফার্মে আর প্রবেশ করবে না মর্মে তাদের জামিন আবেদনে মুচলেকা দিয়ে জামিন গ্রহণ করলেও তাঁরা শর্ত ভঙ্গ করে পুনরায় ফার্মে হামলার ঘটনা ঘটান বলে জানা গেছে।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ তারিখের পত্নীতলা থানার অভিযোগ পত্র সূত্রে জানা গেছে, পত্নীতলা থানাধীন পত্নীতলা মৌজাস্থ খতিয়ান নং-১৫৭, হাল দাগ নং-৩৮৯, রকম-ধানী, পরিমাণ-১৪.৩৩ শতাংশ জমিতে পত্নীতলা গ্রামের মো. রেজাইল ইসলামের পুত্র মো. রাহুল হোসেন (৩৮) চৌধুরী ডেইরী ফার্ম নামে একটি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা শুরু করেন। ফার্মে তিনি ৭টি গরু পালন করছিলেন। ১৫ জানুয়ারী ২০২৩ তারিখে বিকেল আনুমানিক ৫টায় পত্নীতলা বাজারের ইউসুফ আলীর ছেলে ১) মো. ফিরোজ (৪৩), ২) মো. আঃ রশিদ (৩৮), ৩) মো. মিলন হোসেন (৩৫), ৪) মো. রুস্তম (৪২), পিতা- তফিজ উদ্দিন ৫) মো. আনিছুর রহমান জনি (৩৫), পিতা-আব্দুল কুদ্দুস, ৬) মো. জাকির হোসেন (৩৮), পিতা-মৃত আফাজ উদ্দিন, ৭) মো. মাহাবুর (৪২), পিতা-মৃত ইমার উদ্দিন, ৮) মো. রফিকুল ইসলাম (৪১), পিতা-মৃত গিয়াস উদ্দিন ফার্মে আসিয়া বাদী রাহুল হোসেন এর নিকট হতে ৫লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন। বাদী চাঁদা দিয়ে অস্বীকৃতি জানালে তাঁরা বাদীর সাথে বাগ-বিতন্ডতায় লিপ্ত হয়। এ সময় আশেপাশের লোক জড়ো হলো আসামীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।
ঘটনার পরদিন ১৬ জানুয়ারী ২০২৩ তারিখে রাত্রী আনুমানিক ১১টার সময় আসামীরা লাঠিসোটা, লোহার রড নিয়ে বাদীর ফার্মে অনধিকার প্রবেশ করে ভাংচুর শুরু করে। বাদী আসামীদের বাধা প্রদান করলে তাঁরা বাদীকে মারধর করে এবং টিনের বেড়া ও ছাউনি ভাংচুর করে। ফার্মে থাকা গরুর ১লাখ টাকার খাবার ছিটিয়ে ফেলে দিয়ে নষ্ট করে। ২ লাখ টাকা মুল্যের ফার্মের ৪০টি টিন খুলে নিয়ে যায় এবং ৭লাখ টাকা মুল্যের ৭টি গরু নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় বাদী ২২ মার্চ ২০২৩ তারিখে পেনাল কোড ১৮৬০ এর ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩৮৫/৩৮০/৪২৭/৩৪ ধারায় আসামীদের বিরুদ্ধে পত্নীতলা থানায় মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং-২৩/২৩. মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলাটি সার্বিক তদন্তে প্রাপ্ত সাক্ষ্য প্রমাণে, ঘটনার পারিপার্শিকতায় এজাহারনামীয় আসামী ফিরোজ, আঃ রশিদ এর বিরুদ্ধে পেনাল কোড ১৮৬০ এর ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩৮৫/৩৮০/৪২৭/৩৪ ধারায় এবং আসামী মিলন হোসেন, মো. রুস্তম, আনিছুর রহমান, জাকির হোসেন, মাহাবুর ও রফিকুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে পেনাল কোড ১৮৬০ এর ১৪৩/৪৪৭/৩৮৫/৩৮০/৪২৭/৩৪ ধারায় পত্নীতলা থানায় অভিযোগপত্র দায়ের করেন।
আসামীরা আদালতে জমিন নিতে গেলে বিজ্ঞ আদালত এজাহারভুক্ত সকল আসামীকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। আটকের প্রায় ১সপ্তাহ পর আসামীরা জামিনে বেরিয়ে আসেন। আসামীরা জামিন লাভের পর জামিনের শর্ত পুরণ না করায় বিজ্ঞ আদালত আসামী মাহাবুর ছাড়া অপর আসামীদের পুনরায় জেল হাজতে প্রেরণ করেন। ২৩ মার্চ তারিখে আসামীরা পুনরায় জামিন আবেদন করেন। এই জামিন আবেদনে অসামীরা উল্লেখ করেন যে, তাঁরা মুক্ত হলে উক্ত ডেইরী ফার্মে প্রবেশ করবে না এবং ভবিষৎতেও ফার্মে প্রবেশ করবে না। জামিন আবেদনে এ ধরণের অঙ্গিকার করে তাঁরা বিজ্ঞ আদালত হতে জামিন গ্রহণ করেন।
ডেইরী ফার্মে আসামীরা ভবিষৎতে আর প্রবেশ করবে না মর্মে আদালতে জামিন নামায় অঙ্গীকার করে জামিন নিয়ে এলেও ২৫ মার্চ শনিবার দুপুরে বাদী তাঁর ফার্মে গেলে বিবাদীগণ হাতে লাঠি সোটা নিয়ে ফার্মে আসিয়া তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে এবং মেরে হাত পা ভেঙ্গে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ও প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করিলে বাদী প্রাণ ভয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় বাদী মো. রাহুল হোসেন পত্নীতলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। যার ডায়েরী নং-১১৮০, তারিখ-২৫/০৩/২০২৩.
এ বিষয়ে মামলা বাদী রাহুল হোসেন জানান, আসামীরা ধূর্ত ও দাঙ্গাবাজ প্রকৃতির লোক। ইতিপূর্বেও এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করার একাধিক অভিযোগ তাদের রয়েছে। মামলার ১নং বিবাদী মো. ফিরোজ এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে ফোন বন্ধ থাকায় তাঁর বক্তব্য নেওয়ার সম্ভব হয়নি।