সরকারের উন্নয়নমূলক যেকোনো কর্মকান্ডের বিষয়ে উপজেলা পরিষদের সাথে ইউএনও সমন্বয় না করে নিজের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সকল কাজ করায় উপজেলা পরিষদের মাসিক সভা বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধিদের যথাস্থানে বসার ব্যবস্থা না করা, বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দেওয়া ও অসুস্থ্য বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবর্তে তাদের সন্তানরা পুরস্কার নিতে আসলে ইউএনও কর্তৃক আপত্তিকর আচারনের প্রতিবাদে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান চলাকালীন ইউপি চেয়ারম্যানগণ উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফারজানা বিনতে ওহাবের কক্ষে জরুরি সভা করে এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলাল, ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল আহম্মেদ আজাদ, ফারজানা বিনতে ওহাব, ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান হিমু, মশিউর রহমান, দেলোয়ার হোসেন রাঢ়ীসহ অন্যান্যরা।
সোমবার সকালে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে একাধিক জনপ্রতিনিধিরা বলেন, গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে যোগদান করেন নুসরাত ফাতিমা। তিনি যোগদানের পর মৎস্য অভিযানে ব্যবহৃত ট্রলার পুড়িয়ে আলোচনায় আসেন। এরপর উপজেলার চাঁদপাশা ইউনিয়নের এক মুক্তিযোদ্ধার রেকর্ডিয় সম্পত্তিতে জনস্বার্থের দোহাই দিয়ে নালা নির্মান করেন। এতে বাঁধা দিলে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে মারধর করে ভিডিও ধারন এবং তার সন্তানদেরকে বেআইনিভাবে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে কারাদন্ড প্রদান করেন। বিষয়টি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম। পরবর্তীতে পাবলিক পরীক্ষার কেন্দ্রে শিক্ষার্থীরা ক্যালকুলেটর নিয়ে আসলে ইউএনও অর্ধশতাধিক ক্যালকুলেটর ভেঙে ফেলার ঘটনায় উপজেলার রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। এছাড়া গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে অবৈধ ইটভাটাসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কয়েক লাখ টাকা উত্তোলন করে দায়সাড়াভাবে সরকারি কর্মসূচি পালন করা হয়। এছাড়াও তিনি (ইউএনও) ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মান কাজের দায়িত্বে থাকা এক কর্মচারী ও ইটভাটা ম্যানেজারকে কোমড়ে রশি দিয়ে কয়েক ঘন্টা বেঁধে রেখে ছবি তুলে তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এছাড়াও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের অবমূল্যায়ন করে আসছেন। গত ২২ মার্চ ভূমিহীন-গৃহহীনদের মাঝে ভূমি ও গৃহ হস্তান্তর অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে ইউএনও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস কনফারেন্সে আপনার না আসলেও হয়। ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম কিবরিয়া টিপুকে সম্মাননা ক্রেস্ট বিতরণকালে ছবি তুলতে গেলে ইউএনও সাংবাদিকদের বাঁধা প্রদান করে সেখান থেকে বেড়িয়ে যেতে বলেন। এমনকি ২০১৯ সাল থেকে উপজেলার রাহুতকাঠী এলাকার একটি জমি নিয়ে আদালতে চলমান মামলা থাকা সত্বেও বিরোধীয় সম্পত্তিতে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মানের কাজ শুরু করে ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহতি উদ্যোগকে বির্তকিত করছেন ইউএনও নুসরাত ফাতিমা।
সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ১৪ মার্চ উপজেলা পরিষদের মাসিক সমন্বয় সভায় ইউএনও’র বিভিন্ন অনিয়মের প্রস্তাব রেজুলেশনে আনা হলে দুইজন ভাইস চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যান ওই রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেননি। বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সামনে বঙ্গবন্ধুর মুর্যালের নামে বরাদ্দ নিয়ে নিজ বাসভবনের আসবাবপত্র ও তৈজসপত্র ক্রয় করারও অভিযোগ রয়েছে ইউএনও’র বিরুদ্ধে।
এ ব্যাপারে বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী ইমদাদুল হক দুলাল ও ভাইস চেয়ারম্যান ফারজানা বিনতে ওহাব বলেন, উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনের আয়োজনে প্রতিটি রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোনো আলোচনা বা সমন্বয় না করে নিজের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ইচ্ছে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। ফলে তারাসহ অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরা আগামী উপজেলা পরিষদের মাসিক সভা বর্জনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত ফাতিমা উল্লেখিত সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সাথে সকল বিষয় আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হয়।