বখাটে চার যুবকের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে বাড়ি ফিরে সোমবার সকালে ফ্যানের সাথে গলায় শাড়ি পেচিয়ে আত্মহত্যা করে অনি রায় (১৩)। পোস্টমর্টেমের পর মঙ্গলবার দুপুরে অনির লাশ তার বাড়িতে নিয়ে আসে। এরপর লাশ নিয়ে ঝিকরগাছা বাজারে মিছিল হয়েছে। সে যশোরের ঝিকরগাছা হাসপাতাল রোডের মিস্ত্রি পাড়ার কুয়েত প্রবাসী গৌতম রায়ের কন্যা। অনি রায় পার্শ্ববর্তী বদরউদ্দীন হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী। সোমবার সকাল অনুমান সাড়ে দশটায় স্কুল থেকে কোচিং শেষে বাড়িতে ফেরার পথে বখাটেদের ধাওয়া-খাওয়ার শিকার হয়। এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে যশোরের ২৫০ শয্যা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গ থেকে অনি রায়ের লাশ তার বাড়িতে নিয়ে আসে। এরপর এলাকাবাসী অনির লাশ নিয়ে ঝিকরগাছা শহরে মিছিল বের করে। মিছিলকারীগণ শ্লোগানের মাধ্যমে ঝিকরগাছা বদর উদ্দীন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জনৈক ছাত্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি জানান। তার সাথে অনির প্রেমজ সম্পর্ক ছিল বলে মিছিল কারীদের দাবি। এরপর মিছিলকারীরা যশোর বেনাপোল মহাসড়কের ঝিকরগাছার সড়ক সেতুর মুখে লাশ নিয়ে কিছু সময় অবস্থান করে। অবস্থান শেষে তারা লাশ নিয়ে পঞ্চানগর মহাশ্মশাণে দাহর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। অনির মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনির বাবা কুয়েত প্রবাসী গৌতম রায়। তার স্ত্রী কণিকা রায় দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে যশোরের ঝিকরগাছা হাসপাতাল রোডের মিস্ত্রি পাড়ায় বসবাস করেন। এলাকাবাসীর দাবি - ঝিকরগাছার বিভিন্ন স্কুল কলেজ মাদরাসায় যাতায়াত পথে প্রচুর বখাটে উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সকল বখাটেদের অবিলম্বে গ্রেফতার পূর্বক আইনত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। সেই সাথে অনির আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারীকে দ্রুত গ্রেপ্তার দাবি জানানো হয়।
ঝিকরগাছা বদর উদ্দীন হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সামাদ জানান - অনির আত্মহত্যার ঘটনায় আমি সহ আমার স্কুলের সকল স্টাফ খুবই মর্মাহত। অনিকে কারা উত্ত্যক্ত করেছে সেটা আমি জানিনা। তার সাথে কারোর প্রেমের সম্পর্ক ছিল কিনা সেটাও আমার জানার বাইরে।
নিহত অনির মা কণিকা রায় জানান, বেশ আগে আমার মেয়ের সাথে একটি ছেলে সম্পর্ক ছিল এটা জানতাম। পরে সে সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল বলেও আমার মেয়ে আমাকে জানিয়েছিল।
নিহত অনির ভাই অর্ঘ্য রাই (১৮) জানান, ঘটনার দিন সোমবার সকালে তিন-চারটি ছেলে আমার বোনকে ধাওয়া করেছিল। গলায় ফাঁস দেয়ার পর আমার বোনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে তিনজন ছাত্রের সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়েছিল। আমার ধারণা আমার বোনের মৃত্যুর পিছনে এরা দায়ী থাকতে পারে। প্রত্যক্ষদর্শী মোতাছিম বিল্লাহ প্রি ক্যাডেট স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী উর্মি জানায়, আমি স্কুলে যাওয়ার পথে দেখি অনিকে তিন-চারজন ছেলে ধাওয়া করছে। অনি দ্রুত পায়ে বাড়ির দিকে রওনা দিচ্ছে। এরপর আমি স্কুলে চলে যাই।
এ ব্যাপারে ঝিকরগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ সুমন ভক্ত জানান - অনির আত্মহত্যার ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। পোস্টমর্টেম রিপোর্ট হাতে পেলেই আইনত ব্যবস্থা নেয়া হবে।