নীলফামারীর সৈয়দপুর হল বানিজ্যিক শহর। একসময় এটি ছিল দেশের অষ্টম সিটি শহর। আর এ শহরে হল দেশের একমাত্র বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানা। এ কারখানার মধ্যে রয়েছে আরেকটি সেতু কারখানা। ওই সেতু কারখানাটি ছিল সচল। হঠাৎ করে সচল সেতু কারখানাটি হয়ে যায় অচল। গত নয় বছর ধরে সেতু কারখানার উৎপাদন বন্ধ।
ফলে বিরাজ করছে ভুতুরে অবস্থা। কারখানার মুল্যবান লোহা লক্কর পড়ে আছে অযতেœ অবহেলায়। খোলা আকাশের নিচে ওই লোহা লক্কর মরিচা ধরে রঙ পরিবর্তন করেছে। এভাবে পড়ে থাকায় নষ্ট হয়ে গেছে মেশিনগুলো।
কোটি কোটি টাকার মেশিন ইয়ার্ডজুড়ে পড়ে থাকায় তা অচল হয়ে গেলেও কোন মাথা ব্যথা নেই দায়িত্বে থাকা বড় কর্তার। তাছাড়া মুল্যবান মেশিন নষ্টের ব্যাপারে কোন কথাও বলছেন না তারা। সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে তারা কেন যেন নারাজ।দায়িত্বে থাকা একজন জানান, ১৮৬৫ সালে সৈয়দপুর রেলওয়ে সেতু কারখানাটি নির্মিত হয়। এটির আয়তন ১৮ একর জায়গা জুড়ে। এটির ভেতরে রেলওয়ে সেতু কারখানায় রয়েছে মেশিন শপ, ক্রসিং শপ ও গার্ডার ইয়ার্ড শপ নামে তিনটি উপ-কারখানা। রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের স্টেশনের প্লাটফর্ম শেডের মালামাল, রেলওয়ে লাইনের পয়েন্ট এ- ক্রসিং, ব্রিজ গার্ডার, ট্রলি ও মোটর ট্রলি মেরামত, তৈরি, পানির ট্যাংক, ফুটওভার ব্রিজের মালামাল ও ট্যাং স্টেজিংসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রাংশ তৈরি হয় এ কারখানাটিতে। এটি একজন নির্বাহী প্রকৌশলীর তত্বাবধানে পরিচালিত হতো। সম্পূর্ণ পৃথক ব্যবস্থাপনায় এ সেতু কারখানাটি চলে আসতো। প্রতিষ্ঠার পর থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত সহ¯্রাধিক শ্রমিক- কর্মচারী কর্মরত ছিলেন।
১৯৯১ সালে তৎকালীন চার দলীয় জোট (বিএনপি) সরকার রেলওয়ের ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করে। ১৯৯২ সালে বাধ্যতামূলক গোল্ডেন হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে অনেক শ্রমিক-কর্মচারীকে চাকরি থেকে অবসর দেয়া হয়। এতে কমে যায় জনবল। ফলে ২০১৫ সাল থেকে কারখানার উৎপাদন সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমানে সেতু কারখানাটির নিরাপত্তায় রয়েছেন রেলওয়ের নিরাপত্তাবাহিনী (আরএনবি) এবং আনসার বাহিনীর কয়েকজন সদস্য।
সেতু কারখানায় দেখা যায়, গোটা এলাকাজুড়ে ঝোঁপ, জঙ্গল, বড় বড় আগাছ। পাশাপাশি ঝরে পড়া পাতার স্তুপ। খোলা আকাশের নিচে অযতেœ অবহেলায় মাটিতে পড়ে রয়েছে লোহার অ্যাঙ্গেল রড, স্কয়ার রড, কভার প্লেট, মিটার ও ব্রডগেজ লাইনের সেতুর স্পেয়ার গার্ডার। আরও রয়েছে তিস্তা ও পাকশীর হার্ডিঞ্জ সেতুর পরিত্যক্ত লোহা-লক্কর, রেললাইন, একটি বিকল স্টিম ক্রেনসহ বিভিন্ন ধরনের লোহার মালামাল। মাটির নিচে চাপা পড়েছে ফ্রাঞ্চ প্লেট ও কভার প্লেট। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় এবং দেখভালের অভাবে এসব লোহার মালামাল মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। সেই সঙ্গে খোয়াও যাচ্ছে কিছুকিছু মালামাল। সেতু কারখানায় অযতেœ, অবহেলায় পড়ে থাকা এসব যন্ত্রাংশ, মেশিনপত্র ও মালামালের বতর্মান বাজার মূল্য কয়েক কোটি টাকা বলে জানা যায়।
রেলওয়ে শ্রমিকলীগ সৈয়দপুর কারখানা শাখার সম্পাদক ও সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোখছেদুল মোমিন জানান, রেলওয়ে সেতু কারখানাটি বন্ধ থাকায় কোটি কোটি টাকার মেশিনপত্র ও মালামাল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথচ কারখানাটির সামান্য আধুনিকায়ন ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল নিয়োগ দিলে এটি পুনরায় সচল করা সম্ভব হবে। তিনি অবিলম্বে সৈয়দপুরে রেলওয়ে সেতু কারখানাটি পুনরায় চালুর দাবি জানান।
এ বিষয়ে কারখানার ডিএস কোন কথা বলতে চান না সাংবাদিকের সাথে। তিনি বলেন জি এম স্যারের অনুমতি ছাড়া কথা বলা নিষেধ।
তবে বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের এক কর্মকর্তা জানান, সরকার রেলওয়ের উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা গ্রহন করেছে। সেতু রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সৈয়দপুর সেতু কারখানাটির প্রয়োজন।