চলচ্চিত্র বাঁচলে সংস্কৃতি বাঁচবে’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস পালন করা হচ্ছে। প্রতিবছর ৩ এপ্রিল উদযাপন করা হয় জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের এই দিনে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (এফডিসি) গঠনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এই দিনকে স্মরণ করে ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন-বিএফডিসিতে দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়ে আসছে। এরপর থেকে প্রত্যেক বছরই চলচ্চিত্র দিবস ঘিরে এফডিসি রঙিন হয়ে ওঠে। চলচ্চিত্রাঙ্গনের মানুষেরা নানা আয়োজনে পালন করেন দিনটি। মাঝে দুই বছর করোনার কারণে সেইভাবে আয়োজন না করলেও এফডিসিতে সেই সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে সভা সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ দিবসটিকে ঘিরে প্রতি বছরই এফডিসিতে স্মরণিকা প্রকাশ, লাইভ টক শো, লালগালিচা সংবর্ধনা, মেলা, স্থিরচিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, পুতুলনাচ, নাগরদোলা, বায়স্কোপ ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা করা হতো। চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি, পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতিসহ ঢাকাই সিনেমার সব সংগঠন মিলে একসঙ্গে উদযাপন করেন দিবসটি। এ ছাড়া বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীও দিবসটি উদযাপন করে। এক সময়ের জমজমাট চলচ্চিত্র শিল্প আজ ‘ধ্বংসের’ পথে। সামাজিক, রাজনৈতিক সুস্থ পরিবেশ গঠনে চলচ্চিত্র একটি শক্তিশালী মাধ্যম হলেও আমাদের দেশে বর্তমানে চলচ্চিত্রের সেই অবস্থা নেই। এখানে যেসব চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে, তার বেশির ভাগই মানসম্মত নয়। অর্থাৎ বেশির ভাগ চলচ্চিত্রই নির্মিত হচ্ছে ব্যবসায়িক চিন্তা মাথায় নিয়ে। অথচ চলচ্চিত্রগুলো সেভাবে ব্যবসাও করতে পারছে না; আবার এগুলো থেকে দর্শকরাও ভালো কিছু আহরণ করতে পারছে না। তাই একে একে সিনেমাহলগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এক সময়ে দেশে যেখানে দেড় হাজার সিনেমাহল ছিলো। তাই এই প্রেক্ষাপটে, আজকের জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস পালনের গুরুত্ব অনেক। ছয় দশকের বেশি সময় ধরে এদেশে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো শিক্ষা, তথ্য বিনোদন তথা সমাজ সচেতনতামূলক বিভিন্ন বিষয়ের জন্য দর্শকদের মন জয় করে আসছে। মহান ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান কিংবা একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধকে নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রগুলো দেশপ্রেমিক প্রতিটি নাগরিককে আজও অনুপ্রাণিত করছে যে কোন ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে। এর বাইরেও সমাজসচেতনমূলক অনেক চলচ্চিত্রই নির্মিত হয়েছে যেগুলোর নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লিখিত থাকবে। কিন্তু এখন আর সেই দিন নেই। এখন যেসব চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে, তার মধ্যে হাতে গোনা দুয়েকটার নাম উল্লেখ করা যায়, যেগুলোতে নির্মাতাদের মেধা ও মননের ছাপ রয়েছে। আমাদের এই ম্রয়িমান চলচ্চিত্র শিল্পকে জাগিয়ে তুলতে হবে। ভারতীয় ছবির আগ্রাসন কিংবা ইন্টারনেটের যুগেও ভালো ছবি নির্মিত হলে মানুষ হলমুখী হবে, এতে সন্দেহ নেই। যথাযথ শিল্পমান ও কারিগরি দক্ষতা সম্পন্ন চলচ্চিত্র তৈরি হলে দর্শকেরা ভারতীয় ছবির দিকে ঝুঁকবে না। আর এজন্য দরকার সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ববোধ। সর্বোপরি মেধাসম্পন্ন ব্যক্তিরা যদি এই শিল্পে মনোনিবেশ করেন, তবে ভালো কিছু সৃষ্টি হওয়া সম্ভব। এ ব্যাপারে সরকারের যথাযথ সহযোগিতারও দরকার রয়েছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর সেই আশ্বাস বাস্তবায়িত হোক; জাতীয় চলচ্চিত্র দিবসের প্রাক্কালে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।