শিক্ষা ছাড়া কোন জাতির উন্নতি সম্ভব নয়। শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। দেশে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৮ হাজার ৮৭৪। এর আগে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তৈরি করা প্রতিবেদনে হারটি ছিল ৪১ শতাংশ। মাউশি ভিন্ন ভিন্ন স্কুলে তদারক করে। সব ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সারা দেশের প্রতি তিনটি স্কুলের একটিতে স্বল্প কৃতিধারী শিক্ষার্থীদের আলাদা যত্ন নেওয়ার ব্যবস্থা নেই। অভিযোগ রয়েছে, শুধু প্রতিবেদনই তৈরি করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। স্বল্প কৃতিধারী শিক্ষার্থীদের আলাদা করে যত্ন নিলে অকৃতকার্য হওয়ার হার কমে। ঝরে পড়াও কমে যায়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষকদের বড় অংশ শ্রেণীকক্ষে আলাদাভাবে যত্ন নেওয়ার বদলে অর্থের বিনিময়ে ব্যক্তিগতভাবে পড়াতেই (কোচিং ও প্রাইভেট) বেশি আগ্রহী। তাঁরা স্কুলে বাড়তি সময় দিতে চান না। স্কুলে স্বল্প কৃতিধারী শিক্ষার্থীদের বাড়তি যতেœর জন্য সময় না থাকলেও কোচিং ও প্রাইভেটের জন্য সময় ঠিকই বের করে নেন শিক্ষকেরা। শিক্ষার্থীদের কোচিং-প্রাইভেট পড়ানোয় এখন আর কোনো রাখঢাক নেই। বরং শ্রেণীকক্ষের একপ্রকার বিকল্প হয়ে উঠেছে কোচিং-প্রাইভেট। শিক্ষক সমাজে রয়েছে বিভাজন, যেমন- সরকারি শিক্ষক, বেসরকারি শিক্ষক, এমপিওভুক্ত শিক্ষক, নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক ইত্যাদি। এই বিভাজনের মূলে রয়েছে বেতনের বৈষম্য ও সুযোগ-সুবিধার অভাব। বেতনের বাইরে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা, বিশেষ করে পরিবহন, আবাসন ইত্যাদি ক্ষেত্রেও শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা সীমিত। এগুলোর সমাধান হওয়া প্রয়োজন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন ঠিকমতো পড়াশোনা হয় না। কোচিং-প্রাইভেট ছাড়া উপায় নেই। অভিভাবকেরা শিক্ষকদের কাছে একপ্রকার ‘জিম্মি’ হয়ে পড়ছেন। এ থেকে আমাদের যে কোন মূল্যে বেড়িয়ে আসতে হবে। দেশের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় আরও একটি মারাত্মক ক্ষতিকর দিক হল কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ পয়সার লোভে কিন্ডারগার্টেন, প্রাক-প্রাথমিক কেজি-নার্সারি, ইংলিশ মিডিয়াম, বাংলা মিডিয়াম ইত্যাদির মাধ্যমে শিক্ষায় বিভাজন সৃষ্টি করছে। দেশে এখন শহর ছাড়িয়ে গ্রামেও বেসরকারি প্রি-প্রাইমারি শিক্ষার জোয়ার এসেছে। এসব স্কুলে অযৌক্তিকভাবে আকাশচুম্বী ফি আদায় করা হয়। কিন্তু শিক্ষার মান নিন্মমুখী। সহজে পাস করার লোভে অনেকেই ছুটে যায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা কোচিং সেন্টারের দিকে। সংশ্লিষ্টদের এসব সমস্যা সমাধানে সঠিক পরিকল্পনার পাশাপাশি উপযুক্ত শিক্ষকের ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষকদের উচিত কুচিংয়ের উপর নির্ভর না থেকে ক্লাসেই পড়াগুলো সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়ার বা শেষ করার চেষ্টা করা। এতে অন্তত বাড়তি খরচ থেকে মুক্তি পাবে মধ্য আয়ের পরিবাররা।