আগামী ১২ জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) নির্বাচন। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তফসিল ঘোষনার পর আসন্ন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্ধীতা করার জন্য নড়েচড়ে বসেছেন প্রার্থীরা। বিএনপি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা সে বিষয়ে মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোন সিদ্ধান্ত না আসলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আনাগোনা বেড়েছে একাধিক প্রার্থীদের। বসে নেই অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সম্ভ্রাব্য প্রার্থীরা। তবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়ায় নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রশ্নে সিটি নির্বাচন সরকারের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন সচেতন নগরবাসী। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তফসিল ঘোষণার আগেই বিসিসি’র বর্তমান আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়রসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ী নেতারা সম্ভ্রাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে মহানগরীতে নির্বাচনী প্রচারণা বা জনসংযোগে নেমেছেন। এদেরমধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সম্ভ্রাব্য প্রার্থীর সংখ্যাই বেশি। বিএনপির প্রার্থী অংশগ্রহণ করলে এ নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হবে বলে জানিয়েছেন সাধারণ ভোটাররা। তবে শেষপর্যন্ত যদি বিএনপির এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে হয়তো বদলে যেতে পারে বরিশাল মহানগরীর বর্তমান রাজনৈতিক হিসেবে নিকেশ। এ ব্যাপারে বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও বিসিসির সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের ওপর ভরসা করে বিগত নির্বাচনে কিভাবে ভোটকেন্দ্র দখল হয়েছে, দিনের ভোট রাতে হয়েছে তা জনগণ দেখেছেন। তাই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারছাড়া এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই বিএনপি অংশগ্রহণ করবেনা। তারপরেও দলের নীতিনির্ধারকরা যে সিদ্ধান্ত দেবেন সে অনুযায়ী কাজ করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতারা বলেন, দলের হাইকমান্ড থেকে সিদ্ধান্ত আসলে বিসিসি নির্বাচনে প্রার্থী হতে একাধিক নেতা প্রস্তুত রয়েছেন। সূত্রটি আরও জানিয়েছেন, শেষপর্যন্ত বিএনপি এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে সম্ভ্রাব্য মেয়র প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার, সাবেক সাংসদ অ্যাডভোকেট বিলকিস জাহান শিরিন, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আলহাজ¦ এবায়দুল হক চান ও সাবেক মেয়র প্রয়াত আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান রুপন। বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, ইতোমধ্যে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের দলীয় সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমাদের একমাত্র মেয়র প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরিনয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। তবে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, এ বিষয়ে মনোনয়ন বোর্ডের এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মনোনয়ন বোর্ড ও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে যোগ্য মনে করবেন তাকে ঘিরেই দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সূত্রমতে, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বাহিরে কেন্দ্র থেকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশায় একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন। এরমধ্যে উল্লেখ্যযোগ্যরা হচ্ছেন, বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর আপন চাচা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কাল রাতের প্রত্যক্ষদর্শী ও গুলিবিদ্ধ হয়েও প্রাণে বেঁচে যাওয়া আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে ও শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাতের কনিষ্ঠ ছেলে খোকন সেরনিয়াবাত গত পহেলা রমজান নগরীতে তার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী পালনের মধ্যদিয়ে প্রার্থী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেন। দোয়া-মিলাদে বেশকিছু আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী উপস্থিত থাকায় আগামীতে তার সম্ভাব্য সুদৃঢ় অবস্থান অনেকটাই নিশ্চিত করেছেন। ইতোমধ্যে খোকন সেরনিয়াবাত নগরবাসীর সাথে আলাপ-আলোচনার মধ্যদিয়ে সম্ভ্রাব্য প্রার্থী হিসেবে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। অপরদিকে আগাম প্রচার-প্রচরণায় এগিয়ে রয়েছেন মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন। তিনি (মামুন) বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের অনুসারী হিসেবে ইতোমধ্যে বরিশালে নিজের একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। মাহমুদুল হক খান মামুন বলেন, বংশপরম্পরায় আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। বিএম কলেজে ছাত্র রাজনীতি থেকেই জনসেবা করে আসছি। তিল তিল করে আজকের এই অবস্থানে এসেছি। দলের কারণে বহু হামলা, মামলার শিকার হয়ে কারাভোগ করেছি। ২০০৮, ২০১৩ ও ২০১৮ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চেষ্টা করেছি। দল থেকে মনোনয়ন পাইনি। এবার শেষবারের মতো দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মনোনয়ন চাইবো। আশা করছি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বরিশাল নগরবাসীর সেবা করার জন্য আমাকে সুযোগ দেবেন। এছাড়াও বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. জিয়াউল হকও রয়েছেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। প্রকাশ্যে এখনো তিনি প্রচার-প্রচারণায় না আসলেও নগরীতে তার মনোনয়নের ব্যাপারে অনেকটা গুঞ্জন উঠেছে।
সূত্রমতে, ইতোমধ্যে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ব্যাপক জনসংযোগ চালাচ্ছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের উপদেষ্টা প্রকৌশলী ইকবাল হোসেন তাপস। তিনি (তাপস) বলেন, মেয়র হবার চিন্তা থেকে নয়, সেবা করার চিন্তা থেকেই দীর্ঘদিন ধরে নগরবাসীর পাশে আছি ও থাকবো। অপরদিকে এখনও নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে দেখা যায়নি বিগত নির্বাচনে সর্বাধিক আলোচিত মেয়র প্রার্থী ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব এবং বাসদের ডা. মনীষা চক্রবর্তীকে। তবে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এবার চমক দেখাবে হাতপাখা। এমন প্রচারণা নগরীর আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওইদলের নির্ভযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, শারীরিক অসুস্থতার কারণে এবার প্রার্থী হচ্ছেন না মাওলানা ওবায়দুর রহমান মাহবুব। তাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে দলের নায়েবে আমীর মুফতি ফায়জুল করিম প্রার্থী হতে পারেন। প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে সরাসরি কোন মন্তব্য না করলেও তিনি (ফায়জুল করিম) বলেন, সামনে যেহেতু জাতীয় সংসদ নির্বাচন তাই সরকার নিজের স্বার্থে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হতে দেবে। তাই এ নির্বাচনে তারা বরিশালে চমক দেখাবেন।
সূত্রমতে, ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ৩০টি ওয়ার্ডের ১২৩টি ভোটকেন্দ্রে ওইসময় ২ লাখ ৪২ হাজার ১৬৬ জন ভোটার ছিলো। এবার ৩২ হাজার ৮২৯ জন ভোটার বেড়ে মোট ভোটারের সংখ্যা হয়েছে ২ লাখ ৭৪ হাজার ৯৯৫ জন।