দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছে অনেক বিদেশি নাগরিক। তাদের মধ্যে বেশ কিছূ নাগরিকের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। রাজধানীর উত্তরা, গুলশান, বনানী, বারিধারা, ধানমন্ডি, নিকুঞ্জ, বনশ্রীসহ অভিজাত এলাকায় এরা বাড়িভাড়া অথবা হোটেল ভাড়া নিয়ে অবস্থান করে। টুরিস্ট, খেলোয়াড়, বিজনেস কিংবা স্টুডেন্ট ভিসায় বাংলাদেশে এসে ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ফিরে না গিয়ে অবৈধভাবে বসবাস করছেন অনেকেই। তাদের বেশিরভাগই বিভিন্ন সময়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরাও পড়েছেন। এরপর তারা জামিন নিয়ে আবারও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব বিদেশিরা এদেশে এসেই পাসপোর্ট নষ্ট করে ফেলেন। একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, নাইজেরিয়া, ঘানা, সেনেগাল. ক্যামেরুন, লাইবেরিয়া, কেনিয়া, চাঁদসহ আফ্রিকার ১০ টি দেশের ৫ হাজার নাগরিক অবৈধভাবে বসবাস করে বছরের পর বছর ধরে ভয়ঙ্কর প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি কয়েক হাজার অবৈধ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, চীন ও তাইওয়ান নাগরিকের বিরুদ্ধেও রয়েছে একই ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ। এসব নাগরিকরা বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। বাংলাদেশে ফেসবুকে উপহার পাঠানোর নামে প্রতারণা, হেরোইন, কোকেন ও অপ্রচলিত মাদকের কারবার, ব্যাংকের এটিএম বুথে জালিয়াতি, ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, জাল ডলারের কারবার, অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা, সোনা চোরাচালান, অনলাইনে ক্যাসিনো এবং মানবপাঁচারে জড়িত থাকার অপরাধে নানা সময়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বিদেশি চক্র ঢাকায় বসে ফেসবুক ব্যবহার করে এজেন্টের মাধ্যমে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। প্রথমে তারা ফেসবুকে আইডি খুলে বিপরীত লিঙ্গের মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলেন। ই-মেইল, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারেও তারা বন্ধুত্ব গড়েন। একপর্যায়ে মোটা অঙ্কের টাকার লোভ দেখান। ইন্টারনেট ও মোবাইলে লোভনীয় লটারি পাওয়ার মেসেজ পাঠিয়ে মূল্যবান গিফট পাঠানোর কথা বলে পার্সেল ফি আদায় করে প্রতারণা চালান। পুলিশের সূত্র জানায়, তিনটি ক্যাটাগরিতে জরিপ চালিয়ে অপরাধের সঙ্গে জড়িত বিদেশিদের শনাক্ত করা হয়েছে। ক্যাটাগরিগুলো হলো- ভিসা এক্সপায়ার্ড বা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও অবস্থান), ক্রিমিনাল (নানা ধরনের অপরাধে সরাসরি জড়িত) এবং গভর্নমেন্ট ডিজায়ার (সরকারি চাহিদায় অবস্থান)। সূত্রগুলো বলছে, বিদেশিদের অনেকে নিজ দেশের পাসপোর্ট ফেলে দিয়ে বাংলাদেশি জাল পাসপোর্ট ও জাল ন্যাশনাল আইডি (জাতীয় পরিচয়পত্র) ব্যবহার করছে। অনেকে আবার ভোটার তালিকাতেও নাম তুলেছে। বাংলাদেশি নাগরিক বিয়ে করে নাগরিক বনে যাওয়ার চেষ্টাও করছে অনেকে। বিদেশিদের বাংলাদেশে প্রবেশ ও প্রবেশ-পরবর্তী কর্মকাণ্ড তদারকিতে ইমিগ্রেশন বিভাগ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব রয়েছে। তা যথাযথভাবে পালন করতে হবে। বিদেশিদের কাছে বাসা ভাড়া দেওয়ার সময় বাড়ির মালিককে অবশ্যই তার পরিচয় নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র রাখতে হবে। বিদেশি নাগরিকদের অপরাধ কর্মকাণ্ডের প্রতি আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে।