রাজধানীর গুলিস্তানে গত মঙ্গলবার কাপড়ের অন্যতম প্রধান মার্কেট বঙ্গবাজারে ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনায় সর্বস্বান্ত হয়েছে হাজারো মানুষ। সেদিন ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মার্কেটে আগুন লাগে। তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের কয়েকটি বিপণিবিতানে। বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের ভেতর চারটি মার্কেট আছে। সেগুলো হলো বঙ্গবাজার মার্কেট, মহানগর মার্কেট, আদর্শ মার্কেট ও গুলিস্তান মার্কেট। এসব মার্কেটে প্রায় তিন হাজার দোকান আছে। তার সব কটি পুড়ে গেছে। এ ছাড়া বঙ্গবাজারের পাশে অ্যানেক্স টাওয়ার মার্কেটটি সাততলার। এর একাধিক তালায় আগুন লাগে। এর দক্ষিণ পাশে আছে মহানগর কমপ্লেক্স। দোতলা এই মার্কেট টিনের। সেখানে আগুন লাগে। এর পাশে আছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। এর ভেতরে থাকা একটি পাঁচতলা ভবনে দুপুর ১২টার দিকে আগুন লাগে। অগ্নিকাণ্ডের পর আশপাশে তা ছড়িয়ে পড়ায় আশপাশের মার্কেট থেকে মালপত্র সরিয়ে নেন ব্যবসায়ীরা। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ৪৮টি ইউনিটসহ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্য ও স্বেচ্ছসেবীরা মিলে সাড়ে ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় দুপুর ১২টার দিকে এ আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন। এ দুর্ঘটনায় ১১ জন আহত হয়েছে। এদিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিস প্রথম থেকেই অবহেলা করেছে বলে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। ফায়ার সার্ভিস এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দেরি হওয়ার জন্য উৎসুক জনতার ভিড়, পানির সংকট ও বাতাসকে দায়ী করেছে ফায়ার সার্ভিস। মঙ্গলবার সকাল ৬টা ১০ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডের খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। এরপর ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে ৬টা ১২ মিনিটে। তবে আগুনের ভয়াবহতা অনেক বেশি ছিল। এতে এক জায়গায় আগুন নেভানোর পরপরই আরেক জায়গায় আগুন লেগে যাচ্ছিল। এ ছাড়া পানির সংকটের কারণেও আগুন নেভাতে কিছুটা দেরি হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্য ও তাদের স্থাপনায় হামলা করা হয়, যা দুঃখজনক। আরেকটি দুঃখজনক ব্যাপার হলো, ঈদের বাজার উপলক্ষে ব্যবসায়ীদের বেশির ভাগই ঋণ করে দোকানে মালপত্র তুলেছেন। সাতটি মার্কেটের ব্যবসায়ীদের দাবি, আগুন লাগার ঘটনায় তাঁদের হাজার কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে আট সদস্যের একটি কমিটি গঠন করার কথা জানিয়েছে। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশ সবাই দাঁড়াবে, এটাই প্রত্যাশা।