শিশুরা ফুলের মতো পবিত্র। তবে সব ফুল সুসজ্জিত বাগানে থাকার সৌভাগ্য নিয়ে পৃথিবীতে আসে না। এদের ঠাঁই হয় রাস্তায়। যেসব শিশু মা-বাবাহীন বা মা-বাবা থাকা সত্ত্বেও খাদ্যাভাব ও নির্যাতনের শিকার হয়ে পরিবারের সঙ্গে টিকতে না পেরে ঘর ছেড়ে রাস্তায় বসবাস করতে শুরু করে সেসব শিশুদের সাধারণত পথশিশু বলা হয়। পথে কর্মরত শিশু বা যেসব শিশু জীবিকার জন্য তাদের দিনের বেশির ভাগ সময়ই রাস্তায় ব্যয় করে, তারাও পথশিশু। রাস্তায় বসবাসরত পরিবারের শিশু বা যেসব শিশু তাদের পরিবারের সঙ্গে রাস্তায় বসবাস করে, তারাও পথশিশু। বাংলাদেশ সহ সারা সারা বিশ্বে পথশিশুদের দেখা মেলে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল,স্বল্পোন্নত বা অনুন্নত দেশগুলোতে এদের দেখা বেশি মেলে। আমাদের দেশেও চারদিকে এধরনের শিশুর দেখা মেলে। এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে সুবিধাবঞ্চিত পথশিশু আছে সাড়ে ১১ লাখ যার শতকরা ৭৫ ভাগ রাজধানী ঢাকায় বসবাস করে। এর মধ্যে সাড়ে পাঁচ লাখই মাদকাসক্ত এবং অধিকাংশই বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত। এক গবেষণায় দেখা যায় মূলত দারিদ্র্যের কারণে শিশুরা পথশিশুতে পরিণত হচ্ছে। এ ছাড়া বাবা-মায়ের বিবাহবিচ্ছেদ বা একাধিক বিয়ে, তাঁদের মৃত্যু, পারিবারিক অশান্তি, শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন, নদীভাঙন, হারিয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে শিশুরা পরিণত হয় পথশিশুতে। এরা রেলওয়ে স্টেশন, বাসস্টপেজ, লঞ্চ টার্মিনাল থেকে শুরু করে শহরের ফুটপাত, ওভারব্রিজ বা পার্কগুলোতে রাত কাটায়। পথশিশুরা রাজধানীর বিভিন্ন বস্তি, স্টেশনে দলবদ্ধ হয়ে নেশা করে। পথশিশুরা গাঁজা, ডান্ডি ও প্যাথেড্রিনের মতো মাদকে আসক্ত। মাদককে কেন্দ্র করে খুনের ঘটনা ঘটেছে কমপক্ষে এক ডজন। আন্তর্জাতিক শিশু সনদ, শিশু আইনসহ দেশের প্রচলিত আইনে প্রতিটি শিশু তাদের সুষ্ঠু শারীরিক ও মানসিক বিকাশ লাভের জন্য শিক্ষা, খেলাধুলা, খাদ্য ও পুষ্টি, বিনোদন পাওয়ার অধিকার রাখে। কিন্তু দেশের পথশিশুরা এসবের নাগালের বাইরে থাকছে। এই পথশিশুদের জন্য প্রতিবছর ২ অক্টোবর আমাদের দেশে পালিত হয় ‘জাতীয় পথশিশু দিবস’। মাদকাসক্ত শিশু-কিশোরদের সুপথে ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের। তারপরও তাদের ভালো পথে ফিরিয়ে আনতে হলে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। সরকারকে মাদকাসক্ত পথশিশুদের পুনর্বাসনের বিষয়ে কঠোর হতে হবে। পথে বসবাসকারী শিশুদের উদ্ধার করে সমাজসেবার অধীন পরিচালিত হোমগুলোতে আশ্রয় নিশ্চিত করতে হবে। যেসব পথশিশু অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের শনাক্ত করার পাশাপাশি সংশোধনের উদ্যোগ নিতে হবে। এইসব সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য আলাদা ভাবে স্কুল খুলে প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিটি শিশুই তার মেধাশক্তি নিয়ে জন্ম নেয়। শিশুদের মধ্যেই সুপ্ত থাকে প্রতিভা,তারাই হবে দেশ ও জাতির কান্ডারি। তাই আমাদের এই বিপুল পরিমাণের পথশিশুদের শিক্ষিত করে এবং তাদের আর দশটা শিশুর মতোই বড় করে দেশের কাজে লাগাতে হবে।