এলসিতে (ঋণপত্র) কড়াকড়ি আরোপে আমদানির ব্যয় কমলেও রপ্তানি আয়ের তুলনায় তা অনেক বেশি। এতে আয়ের তুলনায় ডলার ব্যয় বেশি হচ্ছে। ডলার সাশ্রয়ের উদ্যোগ নেওয়ার পরও এ বৈদেশিক মুদ্রার সংকট বাড়ছে। এ কারণে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। আবার জরুরি পণ্য আমদানিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার খরচ করায় টান পড়েছে রির্জাভেও। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) মোট এক হাজার ৩৮৩ কোটি ডলারের বাণিজ্য ঘাটতি দেখা দিয়েছে। দেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১০৫ টাকা ধরে) যার পরিমাণ প্রায় এক লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, এলসি খোলায় কড়াকড়ি করায় বড় আমদানি ব্যয় তুলনামূলক কমেছে। তবে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি থাকলেও আমদানি ব্যয়ের তুলনায় তা কম ছিল। এতে ডলারের ওপর এর প্রভাব পড়েছে। ভালো দিক হলো- এলসি খোলা কমায় আগামীতে আমদানি ও রপ্তানি ব্যয়ের ব্যবধান কমে আসবে বলে জানান তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে মোট চার হাজার ৮৭৯ কোটি ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি করেছে দেশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে (২০২১-২২-এর জুলাই-ফেব্রুয়ারি) পাঁচ হাজার ৪৩৭ কোটি ডলারের বিভিন্ন পণ্য আমদানি করা হয়েছিল। সেই হিসাবে গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে চলতি অর্থবছেরর প্রথম আট মাসে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ কম আমদানি হয়েছে। আমদানির বিপরীতে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের আট মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানির পরিমাণ তিন হাজার ৪৯৬ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে তিন হাজার ১৯৪ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। সেই হিসাবে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের আলোচিত সময়ে ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেশি রপ্তানি করেছে দেশ। আলোচিত সময়ে (চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি) আট মাসে আমদানির তুলনায় রপ্তানি কম হয়েছে এক হাজার ৩৮৩ কোটি ডলার। গত ডিসেম্বর শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল এক হাজার ২৩০ কোটি ডলার। হিসাব বলছে, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসেই (জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি) বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে ১৫২ কোটি ডলারের। বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়ায় ডলারের ওপর চাপও বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪৩৮ কোটি ডলার বা ৪৫ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। আলোচিত সময়ে সেবা খাতে ৫৮৩ কোটি ডলার আয় হয়েছে। এ খাতে একই সময়ে ব্যয় হয়েছে ৮৩৯ কোটি ডলার। এতে সেবা খাতের ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৫৫ কোটি ডলার। একই সময়ে সামগ্রিক লেনদেনেও বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফেব্রুয়ারি শেষে সামগ্রিক লেনদেনের (ঋণাত্মক) অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ৭৯৪ কোটি ডলারে, যা ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ে (ঋণাত্মক) ২২২ কোটি ডলারের ঘাটতি ছিল। জুলাই-ফেব্রুয়ারি সময়ে দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৩৫০ কোটি ডলার, যা এর আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১১ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি এসেছে। গত ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ৩১৩ কোটি ডলারের এফডিআই এসেছিল।