গত ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে পোশাকে দোকান, দোকানে বিক্রির জন্য রাখা পোশাক, নগদ টাকা ও ব্যবসায়ীদের হিসাবের জরুরি কাগজপএ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ঈদ উপলক্ষে দোকানে তোলা পোশাক গুলোও সব আগুনে পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। বঙ্গবাজার পোশাকের পাইকারি ও খুচরা ব্যবসা কেন্দ্র। সারা দেশের ব্যবসায়ীরা এখান থেকে কাপড় নিয়ে থাকেন। বঙ্গবাজারে প্রায় পাঁচ হাজার দোকান পুড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মোট ক্ষতির পরিমাণ প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। ফায়ার সার্ভিসের ৫০ টি ইউনিট, সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী, বিজেপি এবং পুলিশের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাত ঘণ্টা পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এখন পর্যন্ত জানা যায় নি কি ভাবে আগুন লেগেছে। ভোর ছ’ টায় আগুনের কু-লী দেখে সবাই বুঝতে পারেন বঙ্গবাজারে আগুন লেগেছে। ফুলবাড়িয়া বঙ্গবাজার কমপ্লে´ সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন এলাকা পড়েছে। পাশাপাশি চারটি বিপনিবিতানের সমন্বিত নাম বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স। এর মালিকানা ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। সিটি কর্পোরেশনের হিসাবে, টিন কাঠের অবকাঠামোতে তৈরি বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দু’ হাজার ৯১৬ টি দোকান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দোকানের সংখ্যা ছিল দ্বিগুন। পানির অভাব, দ্রুত বাতাস প্রবাহ ও উঁচু ভবনের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সংশ্লিষ্টদের বেগ পেতে হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে প্রায় সাত জন ফায়ার ফাইটার আহত হয়ে হাসপাতালে। এরপরও কিছু উশৃঙ্খল জনতা ফায়ার সার্ভিসের প্রধান কার্যলয়ে হামলা চালায় এবং গাড়ি ভাংচুর করে। এমন হামলার নিন্দা করছেন সবাই। এখন আইন প্রণয়নকারী সংস্থার উচিত সংশ্লিষ্ট দোষীদের আইনের আওতায় আনা। অবশ্য ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ রাজধানীর ফুলবাড়িয়া বঙ্গবাজার কমপ্লে´কে চার বছর আগেই অগ্নি নিরাপওার দিক থেকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছিল। তখন ফায়ার সার্ভিস থেকে বঙ্গবাজার কমপ্লে´ে বেশ কিছু ব্যানারও টাঙ্গানো হয়েছিল। সবাই জানতো এ কমপ্লে´ বড় ধরনের অগ্নিঝুকিতে রয়েছে। কিন্তু তারপরও সরকারের অন্য কোনো সংস্থা বা বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতি আগুন প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নেয় নি। এখন আগুন লাগার পরে সরকারের কোনো সংস্থা দায় নিতে চাইছে না। বঙ্গবাজারের খুব কাছেই রয়েছে পুলিশ সদরদপ্তর, সচিবালয়, দক্ষিণ সিটিকর্পোরেশন ভবন, ফায়ার সার্ভিস অফিসসহ গুরুত্বপূর্ণ অফিস। কিন্তু পরিবেশগত ভাবে নেই কোনো পানির পুকুর। ওসমানী উদ্যানে একটি পুকুর থাকলেও তাতে পানি নেই। ভরাট হয়ে গেছে। কোনো কারণে আগুন লাগলে তা পানির অভাবে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে। বঙ্গবাজারের আগুনে পুড়েছে পুলিশ অধিদপ্তরের ব্যারাকও। তাই পরিবেশ প্রতিবেশের প্রতিও সবাইকে সচেতন হতে হবে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে জলাধার গড়ে তুলতে হবে। সাথে বৃক্ষ রোপণ অভিযান অব্যাহত গত রাখতে হবে। আমরা ঘটনা থেকে শিক্ষা নিতে চাই না। তাই সম্প্রতি একের পর এক আগুন লাগার ঘটনা ঘটছে। আগামীতে সবার সচেতনাতা জরুরি। দুর্ঘটনা থেকে আগামীর নিরাপওার পথ খুঁজতে হবে।