ইরি-বোরো ধান চাষাবাদের সাথে জমির আইলে সুস্বাদু মিষ্টি কুমড়ার চাষ করছি। গত বছর আমি ৫০ হাজার টাকা মিষ্টি কুমাড় বিক্রি করেছি। এ বছরও আমি ৫০ হাজার টাকার বেসি মিষ্টি কুমাড় বিক্রি করতে পাবো বলে আশা করছি। আমি বারতী আয়ের এই টাকা দিয়ে আমার ছেলে (অনার্স) ও মেয়ে ( এসএসসি পরিক্ষার্থী) তাদের পড়ালেখার ব্যায়ভার পূরণ করে থাকি। চলতি বছরে অবহাওয়া অনুকুলে থাকায় অন্যন্যা বছরে চেয়ে এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। আমরা গরিব মানুষ তাই একটু জমি যাতে পতিত না থাকে সবটুকু জমি কাজে লাগাই। আমার ২ একর জমির ধানে আইলে কুমড়া চাষ করে এই বারতি ফসল আমার ছেলে-মেয়েরে রেখাপড়ায় সহয়তা করছে। কুমড়া চাষ না করলে আমার যে ধান হয় তা বিক্রীকরলে সারা বছর আমারা খেতে পাতা না। এখন যে ধান হয় তা সারা বছর আমাদের ভালো ভাবে হয়ে যায়। এ কথা গুলো বললোবরিশাল জেলা আগৈঝাড়া উপজেলার প্রত্যান্ত বিলাঞ্চলের বাহাদুরপুর গ্রামের অনিতা ভদ্র।
স্থানীয় সূত্রে জাগা গেছে, বরিশালের উত্তর জনপদ আগৈলঝাড়ায় ইরি-বোরো ধান চাষাবাদের সাথে জমির আইলে সু-স্বাদু মিষ্টি কুমড়ার চাষ হচ্ছে কৃষকেরা। যুগের পর যুগ অনাবাদি পরিত্যাক্ত জমির আইল এখন মিষ্টি কুমারা ফসল ফলাতে কৃষকের মুখে হাঁসি। ধারের পাসা পাসি সবজির মিষ্ট কুমড়ারা শবজির চাহিদা পুরন করছে। গত ১০ বছর যাবত জেলার আগৈলঝাড়া ও উজিরপুর উপজেলার প্রত্যান্ত জনপদের বিলাঞ্চলে জমির আইলে কুমড়ার চাষ করে অনেকেই অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হয়েছে। অনেক চাষি দশ হাজার থেকে একলক্ষ টাকা পর্যন্ত এই মৌসুমে বিক্রি করে বারতী আয়ে হচ্ছে বলে জানা গেছে।
আগৈলঝাড়া উপজেলার বাহাদুরপুর, বাটরা, বারপাইকা, আস্কর, বগধা, জলিরপার, ফেনাবারি, রাজিহার, কোদালধোয়া ও উজিরপুর উপজেলার কুড়লীয়া, পটিবাড়ী, সাতলা, শীবপুর, বিষারকান্দি, জল্লা, মুনশিতালুকসহ প্রত্যান্ত বিলাঞ্চলের ধারেন জমির আইলে মিষ্ট কুমড়ার চাষ করছে। কৃষকেরা সবজির চাহিদা মিটিয়ে আর্থিক লাভবান হচ্ছে। ধানের সাথে একটি বারতি ফসল ফলাচ্ছে কৃষক। উপজেলার বাহাদুরপুর হাটে গিয়ে দেখা যায় প্রতিমন মিষ্টি কুমড়া ৮ শত টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক একটি কুমড়া ওজন ৩ থেকে ১৫ কেজি। এ অঞ্চলের উৎপাদিত কুমড়া এলাকার চাহিদা পুরন করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে। চাষিরা জানান আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবছর ফলন ভালো হয়েছে। তারা বলেন সরকারি সহায়তা পেলে তারা উৎপাদন আরো বাড়াতে পারবেন।
বাহাদুরপুর গ্রামের কৃষক দীপক জয়ধর বলেন আমি ৮ বছর পূর্বে থেকে বাজার থেকে ২ প্যাকেট কুমড়ার বীজ দিয়ে কুমড়ার চাষ শুরু করি এবং সফলতা পাই। আমার যে কুমড়া হয় সেই থেকে বীজ বানাই। আমার দেখাদেখি এ গ্রাম থেকে পার্সে গ্রামের কৃষকরাও এখন কুমড়ার চাষ করছেন। এ গ্রামের দিপক জয়ধর, বিরেন ভদ্র, সাধন মৃধা, সম্পা রানী, মৃনাল পান্ডে, রমনি বকুলা, পরিমল মন্ডল, আরতী হালদার, অনিল বাড়ৈ আমার কাছ থেকে বীজ নিয়ে ধানের পাসাপাসি ধানের আইলে কুমড়া চাষ করে তার এখন সকলে স্বাবলম্বী।
উজিরপুর উপজেলার কুড়লীয়া গ্রামের হরষিত বাড়ৈ, রবীন্দ্র নাথ বিশ্বাস, সাতলা গ্রামের ক্ষীতিশ বাইন, পরিমল মন্ডল, সিরাজুল হক, পটিবাড়ী গ্রামের মাখন রায়, মোঃ রবিউল বলেন, আমরা ধানের জমির আইলে সল্পখরচে কুমার চায় করে আমার ভালো ফল পেয়েছি। যে জায়গা কোন কাজে আসতোনা সে জায়গায় কুমড়ার চাষ করে ১০ থেকে ৪০ হাজার টাকা কুমারবিক্রী করে থাকি প্রতি বছর। চলতি বছরে উৎপাদন বেশি হলেও বাজার মূল্য কম।
এ বিষয়ে আগৈলঝাড়া উপজেলা কৃষি অফিসার দোলন চন্দ্র রায় বলেন, আমি বিষয় গুলো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে। আমার কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিবো যাতে আরো ভালো মুমড়া ফলাতে পারে। রোগ বালাই থেকে রক্ষা করতে পারে। আগামীতে কুমড়া চাষে কৃষকদের প্রনোদনা সহ সকল ধরনের সহায়তা দেওয়া চেষ্টা করবো।