ঈদণ্ডউল ফিতরের কেনা-কাটায় কিছুটা ব্যস্ততা বেড়েছে নগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার শপিংমলসহ বিপনীবিতানগুলোতে। তবে ঈদ বাজার যেভাবে জমে ওঠার কথা সেই রকম প্রাণবন্তভাব নেই মার্কেটগুলোতে। দিনের বেশিরভাগ সময়ে নামিদামী পোশাক ও জুতোর দোকানগুলো থাকছে ক্রেতা শূণ্য। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের উপস্থিতি কিছুটা থাকলেও তাতে সন্তুষ্ট নন বিক্রেতারা।
শনিবার সকালে নগরীর নামিদামী একাধিক প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় প্রতিনিধিরা বলেছেন, বিগত সময়ের চেয়ে এবার ক্রেতা সমাগম অনেকটাই কম। আর ক্রেতারা বলছেন, তুলনামূলকভাবে বরিশালে পোশাকের দাম প্রায় দ্বিগুন। তাই তারা ঈদ বাজারের জন্য অনেকটাই অনলাইনমুখী হয়েছেন। নগরীর বাসিন্দা জিতু আক্তার নাভিলা নামের এক নারী উদ্যোক্তা বলেন, বিভাগীয় শহর বরিশালে পোশাক ও জুতোর দোকান বেড়েছে। ব্রান্ডের প্রতিষ্ঠানগুলো ছাড়া যারা নতুন দোকান দিয়েছেন তারা সবাই ভালো পোশাক সরবরাহ করছেন। তবে তুলনামূলকভাবে দাম অনেক বেশি। তাই বাধ্য হয়ে তারা অনলাইনের মাধ্যমে ঈদের পোশাক ক্রয় করেছেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অনলাইনেও নামিদামী ও বিশ্বস্ত অনেক প্রতিষ্ঠান সুনামের সাথে পণ্য বিক্রি করছে। আর দামও সাধ্যের মধ্যে।
জেসিকা আহম্মেদ জুঁই নামের অপর এক ক্রেতা বলেন, জুতা আর পোশাকের ভিন্নতা খুঁজতে হলে গির্জা মহল্লা, চকবাজার ও কাঠপট্টি এলাকায় শপিংমলে যেতে হবেই। তবে এবার যে দাম হাকা হয়েছে তাতে দেখা ছাড়া, কেনার উপায় নেই। তিনি আরও বলেন, বরিশালের ব্যবসায়ীদের এখন একটাই অজুহাত ঢাকার বঙ্গোবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকান্ড। ওই অগ্নিকান্ডের পর অন্যান্য পাইকারী মোকামগুলোতে নতুন পোশাকের দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যেকারণে বেশি দামে পোশাক ক্রয় করতে হয়েছে, একারণে বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছে। মমতাজ বেগম মম নামের এক নারী বলেন, কাঁচা বাজারের মতো বরিশালের ঈদ বাজারে পর্যাপ্ত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। নয়তো সাধারণ মানুষ শুধু ঈদের নতুন পোশাক কিনতে গিয়েই নিঃস্ব হয়ে যাবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশালে ঈদের পোশাক বাজারে দাম বাড়িয়ে দেওয়ার কারণে অনেকেই এখন পদ্মা সেতুর বদৌলতে মার্কেট করার জন্য ঢাকায় যাচ্ছেন। এসএম মিজান নামের এক যুবক বলেন, বরিশালের পোশাক বাজারে যে দাম তাতে ঈদে শপিংয়ের জন্য বাজেটের টাকায় শার্ট-প্যান্ট কিনলে জুতা হবেনা, আর জুতা হলে শার্ট নয়তো প্যান্ট হবে না, এমন অবস্থা।
তিনি আরও বলেন, পদ্মাসেতুর বদৌলতে আমরা চার বন্ধু সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়ে সারাদিন ঘোরাঘুরির পর নিউমার্কেট দিয়ে ঈদের কেনাকাটা শেষে আবার রাতের বাসে বরিশালে এসেছি। এতে করে বাজেটের কম টাকায় ঈদ শপিং করার পাশাপাশি বাসের ভাড়া ও ঘোরাঘুরির টাকা খরচ করে এখনও কিছু টাকা হাতে রয়েছে।
সুমন তালুকদার নামের অপর যুবক বলেন, বরিশালে ব্রান্ডের দোকান ব্যতিত যেসব দোকান রয়েছে সেখান থেকে টি-শার্ট, ফরমাল শার্ট ও প্যান্ট কিনতে যে টাকা খরচ হতো, বলতে গেলে তার একটার টাকা দিয়ে দুইটা কিনেছি ঢাকা থেকে। শার্ট-প্যান্ট ছাড়াও এলিফ্যান্ট রোড থেকে অল্প দামে ভালো মানের জুতাও কিনেছি। যেসব জুতা বরিশালে পাওয়াই যায়না।
সূত্রমতে, বরিশালে কসমেটিকস ও কাপড়ের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রির অভিযোগে গত কয়েকদিন ধরে টানা অভিযান পরিচালনা করছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। প্রতিদিনই কোনো না কোনো নামিদামী প্রতিষ্ঠানকে আর্থিকভাবে জরিমানাও করা হচ্ছে। তারপরেও থামানো যাচ্ছেনা ঈদ মৌসুমে অধিক মুনাফার লোভে দাম বাড়িয়ে দেওয়া কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ীদের।
এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বরিশাল জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুমি রানী মিত্র জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিটি পণ্যে যেখানে যৌক্তিক একটা লাভ করা যায়, সেখানে বরিশালের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ লাভ করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ ছাড়া অনেকে অনৈতিকভাবে আলাদা করে সংযুক্ত করেছে ভ্যাট। এগুলোর বিরুদ্ধে চলমান অভিযানে মোটা অংকের টাকা জরিমানা করেও ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রনে আনা যাচ্ছেনা।