ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রির দ্বিতীয় দিনে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) নির্বাচনে নৌকা পেতে চাচা-ভাতিজাসহ চারজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। বর্তমান সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ আজমীর শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে ভারত গমন করায় প্রথমদিন তার পক্ষে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়নি। দ্বিতীয় দিনে (সোমবার) তার পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীরসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দরা। এরআগে রোববার মনোনয়ন বিক্রির প্রথমদিন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই (বর্তমান মেয়র সাদিক আব্দুল্লাহর একমাত্র চাচা ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপির ছোট ভাই) আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত, মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন এবং মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১২ এপ্রিল বিকেল চারটা পর্যন্ত দলীয় মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষসময় নির্ধারন করেছে দলটি। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই বরিশাল নগরী সরগরম হয়ে উঠেছে আলোচনায়। সম্ভাব্য প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে নগরীর অলি-গলি। বিরোধীদল বিএনপির নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা আর নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার দোটানায় থাকা বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) নিয়ে এই মুহুর্তে দুশ্চিন্তা নেই। তবে রাজনীতির জটিল সমীকরণ ইতোমধ্যে আলোচনার তুঙ্গে নিয়ে গেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর বলেন, বরিশালে সিটি কর্পোরেশনে নৌকার প্রার্থী বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। তার বিকল্প চিন্তা এমনকি প্রস্তাবনাও করবে না নগর আওয়ামী লীগ। তবে নৌকা পেতে আরও তিনজন প্রার্থী কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে জোর লর্বিং করে যাচ্ছেন। এরমধ্যে সাদিক আব্দুল্লাহর আপন চাচা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভয়াল কাল রাতের গুলিবিদ্ধ আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাতের মেয়র পদে প্রার্থীতা ঘোষণার পর নগরবাসীর মধ্যে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। এ ছাড়া মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক খান মামুন ও মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন নৌকা পেতে দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার পর নগরবাসী আলোচনার টেবিলে কে হচ্ছেন নৌকার প্রার্থী তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন। আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইবো। তিনি দিলে আমি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করবো। আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমি কি করবো তা নির্ভর করে দলীয় প্রধানের ওপর। তবে আমি নির্বাচন করতে চাই। মাহামুদুল হক খান মামুন বলেন, দলীয় মনোনয়ন পেতে আমি ফরম সংগ্রহ করেছি। দল মনোনয়ন দিলে ভোটের মাঠে থাকবো। মনোনয়ন না পেলে কি করা হবে তা নগরবাসীকে নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো। তিনি আরও বলেন, ১৯৮০ সালে আমি ছাত্রলীগের রাজনীতির মধ্যদিয়ে রাজনীতিতে যুক্ত হই। দীর্ঘ পরিক্রমায় কখনো নৌকা ছেড়ে যাইনি। আমি সুবিধাভোগী কর্মীও না। আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে নগরবাসীর জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমানে সিটি কর্পোরেশন দিয়ে নগরবাসী ন্যূনতম সেবা পাচ্ছেন না। তারা এই অবস্থার পরিবর্তন চায়। মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, বিগত পাঁচ বছরেও নগরবাসীর আশা পূরণ হয়নি। জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। জনগণের স্বার্থেই আমি নেত্রীর কাছে মনোনয়ন চাইবো। আশা করি দুঃসময়ের পরীক্ষিত একজন ছাত্রনেতা হিসেবে নেত্রী আমার বিষয়টি বিবেচনা করবেন। এছাড়াও বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. জিয়াউল হক, বিএম কলেজের সাবেক ভিপি মঈন তুষার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্ধিতা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে তারা এখনও দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন কী না তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, এবারের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় আগামী ১৬ মে, বাছাই ১৮ মে, বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল ১৯ থেকে ২১ মে, আপিল নিস্পত্তি ২২ থেকে ২৪ মে, প্রার্থীতা প্রত্যাহারের শেষদিন ২৫ মে। প্রতীক বরাদ্দ ২৬ মে এবং ভোটগ্রহণ করা হবে আগামী ১২ জুন।