জেলার মুলাদী উপজেলার বাটামারা ইউনিয়নের আকন এবং হাজী গ্রুপের হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে আরও একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনও নিখোঁজ একজনের সন্ধান মেলেনি। নিহত দুইজনের লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেছে পুলিশ। ঘটনার পর সোমবার মধ্যরাত থেকে ওই এলাকায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন থেকে চলে আসা বিরোধের জেরধরে জেলার মুলাদী উপজেলার বাটামারা ইউনিয়নের আকন ও হাজী গ্রুপের সদস্যরা একে অপরের ওপর হামলার জন্য আগেই প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। যেকারণে গত ১০ এপ্রিল সকালে হাজী গ্রুপের ঢাকায় বসবাসরতরা হেলমেট পরে গৌরনদী হয়ে নিজ এলাকায় ফেরেন। তারা এলাকায় আসার খবর পেয়ে আকন গ্রুপের লোকজনে থানা পুলিশের কাছে সহায়তাও চেয়েছিলেন। হাজী গ্রুপের লোকজন এলাকায় আসার পরেই উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে।
ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মজিবুর রহমান সরদার জানান, আধিপত্য নিয়ে স্থানীয় বাটামারা ও সফিপুর ইউনিয়নের কবিরাজ, আকন, হাওলাদার ও হাজী গ্রুপের মধ্যে দীর্ঘদিন থেকে বিরোধ চলে আসছে। তবে এ চারটি গ্রুপ আবার দুটি গ্রুপে বিভক্ত। যারমধ্যে কবিরাজ ও আকন গ্রুপ মিলে একটি পক্ষ আর হাওলাদার ও হাজী গ্রুপ মিলে অপর আরেকটি পক্ষ। তিনি আরও জানান, বাটামারা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড পূর্ব তয়কা গ্রামের বাসিন্দা দাদন হাওলাদারের ভাই আনিছ হাওলাদার কয়েক বছর আগে খুন হন। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর দীর্ঘ কয়েক বছর এলাকা ছাড়া ছিলেন আকন গ্রুপের সদস্য একই গ্রামের হেলাল বেপারী ও তার ভাই কামাল বেপারীসহ অনেকেই। গত কয়েকদিন পূর্বে তারা নিজ এলাকায় ফেরেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ১০ এপ্রিল সকালে দাদন হাওলাদারের পক্ষে হাজী গ্রুপের ঢাকায় বসবাসরতরা হেলমেট পরে নিজ এলাকায় ফেরেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আলী হোসেন বলেন, ১০ এপ্রিল দিবাগত রাত সাড়ে আটটার দিকে হাজী গ্রুপের ৩০ থেকে ৩৫ জন ব্যক্তি দুটি ট্রলারে করে স্থানীয় চাকলা বাজারে আসে। তখন পুলিশ সদস্যরাও সেখানে ছিলো। পরে আকস্মিকভাবে বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো শুরু করা হলে পুলিশ সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে জাগরনী এলাকার দিকে চলে যায়। আলী হোসেন অভিযোগ করেন, তার বাড়ির সামনেও বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। এ সময় তার স্ত্রী সংরক্ষিত ইউপি সদস্য মাহিমা বেগম প্রতিবাদ করলে তাকেও মারধর করা হয়। একপর্যায়ে হাজী গ্রুপের লোকজন স্থানীয় বেপারী বাড়িতে প্রবেশ করে তিনজনকে ধরে নিয়ে যায়। এরমধ্যে রাতেই হেলাল বেপারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহত হেলালের স্বজনরা জানিয়েছেন, পূর্ব বিরোধের জেরধরে সাত বছর পর গত ১৫দিন পূর্বে বাড়িতে ফেরেন হেলাল ও তার ভাই কামাল। এরপর কয়েক বার হাজী গ্রুপকে বিষয়টি মীমাংসার প্রস্তাব দেওয়া হলেও তারা তাতে রাজি না হয়ে প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তারই ধারাবাহিকতায় এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটানো হয়েছে।
বাটামারা ইউপি চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন অশ্রু বলেন, আকন গ্রুপের সদস্য নিহত হেলাল বেপারী (৪০) বাটামারা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব তয়কা গ্রামের বাসিন্দা সেলিম বেপারী ছেলে। ইউপি চেয়ারম্যান আরও বলেন, একই হামলার ধরে নেওয়া অপর ব্যক্তি আলমগীর কবিরাজের (৫০) লাশ মঙ্গলবার সকালে সফিপুর এলাকার একটি বিল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত আলমগীর বালিয়াতলী এলাকার জলিল কবিরাজের ছেলে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হলেও নিহত হেলালের ভাই কামাল বেপারী নিখোঁজ রয়েছেন।
মুলাদী থানার ওসি তুষার কুমার মন্ডল বলেন, নিহত দুইজনের লাশ উদ্ধার করে মঙ্গলবার দুপুরে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, উভয়কে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, দুইগ্রুপের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনায় দুইজন নিহত ও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে বিপুল পরিমান পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।