ত্রিপুরাদের ‘বৈসু’, মারমাদের ‘সাংগ্রাই’ আর চাকমাদের ‘বিজু’। এই তিনের আদ্যাক্ষর নিয়ে ‘বৈসাবি’। বৈসাবি মানেই পাহাড়ে প্রাণের উৎসব আর সম্প্রীতির মেলবন্ধন। অরণ্য ঘেরা পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী সামাজিক উৎসব বৈসু-সাংগ্রাই-বিঝু বা বৈসাবির উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে পাহাড়ের আনাচে কানাচে। মঙ্গলবার সকালের দিকে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে নানা রঙের বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে বর্ণাঢ্য বৈসাবি উৎসবের উদ্বোধন করেন ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি।খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের জনসংযোগ কর্মকর্তা চিংলামং চৌধুরীর সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে খাগড়াছড়ির রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. গোলাম মহিউদ্দিন আহমেদ, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী অপু, খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান, খাগড়াছড়ি মং সার্কেল চিফ রাজা সাচিংপ্রু চৌধুরী ও খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. নাইমুল হক প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় ডিজিএফআইয়ের ডেট কমান্ডার লে. কর্নেল মো. শাহ আলম সিদ্দিকী, এনএসআইয়ের যুগ্মণ্ডপরিচালক মো. ফিরোজ রাব্বানী, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের প্রধান নির্বাহী কৃষ্ণ লাল চাকমা, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) টিটন খীসা, খাগড়াছড়ি পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী, খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শানে আলম, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য কল্যাণ মিত্র বড়ুয়া ও পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য হিরণ জয় ত্রিপুরা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উৎসবের উদ্বোধনকালে ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান (প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদা) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেন, পাহাড়ের সব মানুষ যেন সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করতে পারে সেজন্য কাজ করছে সরকার। বৈসাবি উৎসব পাহাড়ের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধন। বৈসাবি উৎসবের উদ্বোধনের পর খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা খাগড়াছড়ি জেলা শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ঘুরে শাপলা চত্বর হয়ে টাউন হল প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয়। বর্ণাঢ্য সাজ আর বর্ণিল পোশাকে শোভাযাত্রায় শামিল হন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নানা বয়সী মানুষ। উৎসব জুড়ে ছিল চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরাসহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী পোশাক। শোভাযাত্রা শেষে খাগড়াছড়ি টাউন হল প্রাঙ্গণে পার্বত্য জেলা পরিষদের উদ্যোগে পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী গড়য়া/গড়িয়া নৃত্যসহ ডিসপ্লে প্রদর্শন করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির লোকজন। ১৯৮৫ সাল থেকে খাগড়াছড়িসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত চাকমা, ত্রিপুরা ও মারমা সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের সম্মিলিত উদ্যোগে ‘বৈসাবি’ নামের এ উৎসব পালন করে আসছে। সময়ের ব্যবধানে নিজ নিজ সম্প্রদায়ের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘বৈসাবি’ উৎসব।