আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে পুলিশের সামনে থেকে হাত বোমা ফাটিয়ে তুলে নিয়ে দুইজনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি জেলার মুলাদী উপজেলার বাটামারা ইউনিয়নের পূর্ব তয়কা গ্রামের।
নৃশংস এ হত্যাকান্ডে নিহত উপজেলার সফিপুর ইউনিয়নের উত্তর বালিয়াতলী গ্রামের জলিল কবিরাজের ছেলে ও আকন গ্রুপের সমর্থক আলমগীর কবিরাজের (৪৫) স্ত্রী রাবেয়া বেগম বুধবার সকালে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, দুইটি সাজানো মামলায় সাত বছর গ্রামের বাহিরে পলাতক থাকার পর একমাস আগে তার স্বামী আলমগীর নিজ বাড়িতে আসেন। এরপর থেকেই প্রতিপক্ষ হাজী গ্রুপের লোকেরা তাদের ওপর হামলার পরিকল্পনা করে আসছিলো। তিনি আরও বলেন, ১০ এপ্রিল স্থানীয় আলম মেম্বরের নির্দেশে থানা পুলিশ এসে আকন গ্রুপের পাঁচজনকে আটক করে। এ সময় পূর্ব তয়কা গ্রামের বাসিন্দা সেলিম বেপারীর ছেলে কামাল আটক থেকে রক্ষা পেতে দৌড় দিলে পুলিশ তাকে উদ্দেশ্য করে গুলি ছোড়ে। এতে কামাল আহত হয়ে আত্মগোপনে চলে যান। একপর্যায়ে আকন গ্রুপের সমর্থকদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হাজী গ্রুপের সমর্থকরা পুলিশের সামনে বসে হাতবোমা নিক্ষেপ করতে থাকে। ওইসময় প্রাণবাঁচাতে তার স্বামী আলমগীর হোসেন ও হেলাল বেপারী খড়ের গাদার মধ্যে লুকিয়ে থাকেন। সেখান থেকে তাদের দুইজনকে হাজী গ্রুপের সমর্থকরা বের করে বিলের মধ্যে নিয়ে এলোপাতাড়ি ভাবে কুপিয়ে ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত আলমগীরের স্ত্রী রাবেয়া বেগম আরও অভিযোগ করে বলেন, পুলিশের সহযোগিতায় তার স্বামী ও হেলাল বেপারীকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি এ নৃশংস হত্যাকান্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করেন।
বাটামারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সালাউদ্দিন অশ্রু বলেন, শত বছর থেকে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ওই এলাকার দুইটি গ্রুপের মধ্যে দ্বন্ধ রয়েছে। হাজী ও আকন গ্রুপ নামে পরিচিত ওই দুই গ্রুপের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। পুরনো সেই দ্বন্ধের জেরধরে ১০ এপ্রিল রাতে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে আকন গ্রুপের হেলাল বেপারী ও আলমগীর কবিরাজ নিহত হয়েছেন। চেয়ারম্যান আরও জানান, নিহত হেলালের ভাই কামাল বেপারী নিখোঁজ ছিলো। বুধবার সকালে তাকে (কামাল) গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তবে তাকে কোথায় নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে সে বিষয়টি জানা যায়নি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় সংরক্ষিত ইউপি সদস্য মাহিমা বেগমের স্বামী আলী হোসেন বলেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ৭/৮ বছর পূর্বে হাজী ও আকন গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। এতে হাজী গ্রুপের আনিস নামের একজন নিহত হয়। ওই হত্যা মামলার আসামি আকন গ্রুপের সদস্য হেলাল বেপারী, কামাল বেপারী ও আলমগীর কবিরাজ এলাকায় আসার খবর পেয়ে তাদের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশকে খবর দেয় হাজী গ্রুপের সক্রিয় নেতা ও ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আলম বেপারী।
আলী হোসেন আরও বলেন, পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তারও করেন। তখন আলম বেপারীর নেতৃত্বে দুইটি ট্রলারে ৩০/৩৫ জন লোক বোমা, টেটা, রামদা, বগি দাসহ ধারালো অস্ত্র নিয়ে আসে। তারা পুলিশের সামনে বসেই বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে হেলাল বেপারী ও আলমগীর কবিরাজকে ধরে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। হামলাকারীদের প্রতিবাদ করায় তার (আলী হোসেন) স্ত্রী সংরক্ষিত ইউপি সদস্য মাহিমা বেগমকেও মারধর করা হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তখন পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে ফাঁকা গুলি করে।
মুলাদী থানার ওসি তুষার কান্তি মন্ডল বলেন, ১০ এপ্রিল গ্রেপ্তারি পরোয়ানার এক আসামিকে গ্রেপ্তার করতে যায় পুলিশ। এ সময় একদল লোক এসে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছোড়ে। ওসি আরও বলেন, কোনোভাবে পরিস্থিতি শান্ত করতে না পেরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চলে আসলেও পরে আরও ফোর্স নিয়ে রাতে সেখানে যাই। পরে দুইজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ইউপি সদস্য আলম বেপারী ও সাইদ নামের দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যান্যের গ্রেপ্তারের জন্য পুলিশের অভিযান চলছে। এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার মো. ওয়াহিদুল ইসলাম বলেন, পুলিশের কোনো পক্ষ হয়ে কাজ করার সুযোগ নেই। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পুলিশ ফাঁকা গুলি করেছে। তবে বাস্তবতা কি সেটি খতিয়ে দেখা হবে।