বাঙালির নিজস্ব জাতিসত্ত্বার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার অন্যতম উৎসব বৈশাখ বর্ষবরণকে ঘিরে গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই চলছে নানা আয়োজনের প্রস্তুতি। বাংলা বছরের প্রথমদিনে বৈশাখ বরণেই থাকছে মঙ্গল কামনায় শোভাযাত্রার আয়োজন, পাশাপাশি আয়োজন করা হচ্ছে বৈশাখী মেলা ও লোকজ সংস্কৃতি প্রদর্শনী, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।
মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন নিয়ে বরিশালে দিন-রাত ব্যস্তসময় পার করেছেন চারুকলা-উদিচীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংগঠক, কর্মী ও শিল্পীরা। আবহমান বাংলার সংস্কৃতির বিভিন্ন চিত্র ফুটিয়ে তুলতেই তাদের এ ব্যস্ততা ছিলো। এখন চলছে শেষসময়ের খুটিনাটি প্রস্তুতি। এ ছাড়া বৈশাখকে বরণ করতে প্রস্তুত রয়েছে বরিশাল।
চারুকলা বরিশালের ৩২ তম আয়োজনে আগাম সকল প্রস্ততি সম্পন্ন করা হয়েছে নগরীর বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়কস্থ তাদের অস্থায়ী কার্যালয় ও সিটি কলেজ প্রাঙ্গনে। সেখানে বসে চারকলার ছাত্র-ছাত্রী, সংগঠক ও শিল্পীরা নতুন করে তেরী করছেন কৃত্রিম বাঘ, টাট্টু ঘোড়া, পাখি। তৈরি হচ্ছে বাঁশি বাদক রাখালের ভাস্কর্য, লোকচিত্র, মুখোশ, রাখি ও মুকুট।
মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনের সমন্বয়ক চন্দ্র শেখর রায় বাবুল ও দুর্জয় সিংক বলেন, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে পহেলা বৈশাখ সকাল আটটায় বজ্রমোহন বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে জাতীয় সংঙ্গীত, মঙ্গলগীত, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা ও গুনীজন সম্মাননা, রাখি বন্ধনসহ চারুকলা ও উদীচী শিল্পগোষ্ঠীর যৌথ আয়োজনের মঙ্গল শোভাযাত্রার উদ্বোধণ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, রমজানের পবিত্রতা রক্ষা করেই আশাকরছি নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী, শিশুসহ সকল বয়সের মানুষ মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করবেন। বর্ণময় এই মঙ্গল শোভাযাত্রায় উদীচী শিল্পগোষ্ঠী প্রতিবছরের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এবারেও আয়োজন করে চলছে নানান অনুষ্ঠানের। বাঙালি সংস্কৃতির বিভিন্ন উপাদান নিয়ে সৃষ্টিশীল কাজ করা বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী বরিশাল জেলা সংসদ বিগত ৩৯ বছরের ধারাবাহিকতায় এবছরও বাঙালির প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ-১৪৩০ বরন উপলক্ষে ব্রজমোহন বিদ্যালয় মাঠে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
উদীচী বরিশাল জেলা সংসদের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরন বলেন, অনুষ্ঠান মালার মধ্যে পহেলা বৈশাখ সকাল সাড়ে ছয়টায় প্রভাতী অনুষ্ঠানের পরপরই রয়েছে রাখি বন্ধন, ঢাক উৎসব ও আটটায় সার্বজনীন মঙ্গল শোভাযাত্রা। ব্রজমোহন বিদ্যালয় মাঠ থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে নগরীর বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সদররোডস্থ অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে শেষ হবে। এছাড়াও সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। পাশাপাশি ১ থেকে ৩ বৈশাখ পর্যন্ত বিএম স্কুল প্রাঙ্গনে আয়োজন করা হয়েছে ৩৯ তম উদীচী বৈশাখী মেলার। যেখানে প্রতিদিন সন্ধ্যায় আয়োজন করা হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অপরদিকে বর্ষবরণ উপলক্ষে সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। পাশাপাশি বরিশাল জেলার প্রতিটি উপজেলায় প্রতিবছরের ন্যায় এবারও গ্রামীণ বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে ইতোমধ্যে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য সবধরনের প্রস্তুতি গ্রহন করেছে বরিশাল মেট্রোপলিটন ও জেলা পুলিশ।
অপরদিকে বর্তমানে নদীতে ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকার কারণে বাজরে পাওয়া যাচ্ছে অধিকাংশ সাগর ও মিয়ানমারের ইলিশ। তাও আকাশ ছোঁয়া দাম। পাশাপাশি পবিত্র রমজান মাস থাকার কারণে পহেলা বৈশাখের দিন সকালে থাকছে না পান্তা ইলিশের আয়োজন।