স্বাধীনতাসংগ্রামের বীর সেনানী, চিকিৎসাক্ষেত্রে অনবদ্য ভূমিকা পালনকারী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে শেষবিদায় জানাতে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হয়েছিল অগণিত মানুষ। গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় তারা তাঁর কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের ব্যানারেও এসে শ্রদ্ধা জানিয়েছে অনেকে।
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ছেলে বারিষ চৌধুরী জানিয়েছেন, সাভারে তাঁর বাবার গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে তাঁকে দাফন করা হবে। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ জানিয়ে তিনি বলেছেন, তাঁরা দুটি প্রতিষ্ঠানকে দেহদানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা তাঁর দেহে ছুরি চালাতে পারবেন না জানিয়ে ‘রাজি হয়নি’।
গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মরদেহ আনা হয় শহীদ মিনারে। এর আগে সকালে ধানমণ্ডিতে নিজ বাসভবনের সামনে অনুষ্ঠিত হয় তাঁর প্রথম জানাজা। সকাল ১০টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় জানাজা।
শহীদ মিনারে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মরদেহে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাঁচার্য এ কে আজাদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, রাশেদ খান মেননসহ অনেকে। পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতীয় পার্টি, সিপিবি, জাসদ, গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
শ্রদ্ধা জানানো শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সাবেক শিক্ষক ও রাষ্ট্রচিন্তাবিদ অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, জাফরুল্লাহ চৌধুরীর শারীরিক মৃত্যু হলেও তিনি তাঁর কর্মের মাধ্যমে অমর হয়ে থাকবেন। স্বাধীনতার আগে ও পরে দেশের সাধারণ মানুষের জন্য তাঁর মহান কীর্তিগুলো চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী, শ্রমিক সংগঠন ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয় এ কীর্তিমানকে। শ্রদ্ধাভরে তাঁকে স্মরণ করে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে তাঁর বীরত্ব ইতিহাসে অমর। বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকার জন্য আমৃত্যু কাজ করেছেন। তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা অপরিসীম।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দেশাত্মবোধ ও সাহসের প্রশংসা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ রাষ্ট্রকে সত্যিকার অর্থে একটি জনগণের রাষ্ট্র, একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র, সাধারণ মানুষের একটি সমাজ নির্মাণ করার জন্য সারাটা জীবন তিনি উৎসর্গ করেছেন। তাঁর প্রতি আমরা শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, স্যালুট জানাচ্ছি।’
শ্রদ্ধা জানানো শেষে দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর তৃতীয় জানাজায় অংশ নেয় হাজারো মানুষ। জানাজার নামাজ পড়ান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব সৈয়দ এমদাদ উদ্দিন। জানাজায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ দেশের সর্বস্তরের নাগরিক অংশ নেয়।
এখানে জানাজার আগে জাফরুল্লাহ চৌধুরীর ছেলে বারিষ চৌধুরী সবার উদ্দেশে বলেন, ‘আমার পিতা জাফরুল্লাহ আমৃত্যু দেশের মানুষের পক্ষে কাজ করেছেন। তাঁর ভুলত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল মরণোত্তর দেহদানের। তবে আমাদের পরিবারের সবাই এবং বাবার সহকর্মীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁকে সাভারে সমাহিত করা হবে।’ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ এবং বাবার নিজের গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজকে দেহদানের প্রস্তাব দিলে সেখান থেকে জানানো হয়েছে, তারা কেউ ‘এই দেহে ছুরি লাগাতে পারবে না’।
আমাদের সাভার প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সকাল ১০টায় তাঁর মরদেহ নেওয়া হবে সাভারের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে। জুমার নামাজ শেষে অনুষ্ঠিত হবে তাঁর চতুর্থ জানাজা। জানাজা শেষে নিজের প্রতিষ্ঠিত গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতাল কমপ্লেক্সে দাফন করা হবে জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে।
মঙ্গলবার রাত সোয়া ১১টায় নিজের প্রতিষ্ঠিত ঢাকার গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে জাফরুল্লাহ চৌধুরী চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।