মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানের মালখানগর গ্রামে ৬ টি মাদক স্পটে এলাকাবাসী অভিযান চালিয়েছে, এ সময় ২ টি স্পটের ৩ টি আস্তানা বা মাদক সেবনের দোচালা ৩ টি টিনের ঘর আংশিক ভেঙ্গে দিয়ে হুশিয়ার করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা হেরোইন, ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি করে আসতেছিলো।
শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর দুপুর ২ টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪ টা পর্যন্ত এলাকাবাসী এ অভিযান চালায়। মালখানগর গ্রাম্য সমাজ, মসজিদ কমিটি, যুব সমাজ, স্থানীয় সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, জন প্রতিনিধি, রাজনৈতিক, কাজীর বাগ, রথবাড়ি, মালামত, নাইশিং, দেবিপুরা ও গোড়াপীপাড়া গ্রামের ব্যাক্তিবর্গ মিলে ৩ শতাধিক লোক মাদক স্পট উচ্ছেদে অংশগ্রহণ করেন।
অভিযানকালে মালখানগর চৌরাস্তা সংলগ্ন মাদক ব্যবসায়ী সুমন পালিয়ে যায়, তার বাড়িতে ২টি আস্তানায় মাদকের নানা সরঞ্জাম, হেরোইন মাপার গ্রাম, মিলিগ্রাম মাপার ২ টি মেশিন পাওয়া যায়, যা কিনা জুয়েলারি দোকানে স্বর্ণ মাপতে দেখা যায়। সুমনের পরিবারের লোকজনকে জানিয়ে দেওয়া হয়, আজ থেকে মাদক ব্যবসা বন্ধ না হলে আগামী শুক্রবার গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করা হবে। পাশেই মনিরের স্পট সেখানে মাদক ব্যবহারের নানা সরঞ্জাম পাওয়া যায় এবং একটি ঘর মাদক সেবনকারীদের বসার জন্য, সেটি ভেঙ্গে দেওয়া হয় ও পরিবারের লোকজনকে জানিয়ে দেওয়া হয় মাদক বিক্রি করলে গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করা হবে। একই কথা জানানো হয় মৃত মঞ্জু মেম্বারের ছেলে সোহাগ, ঠাকুরবাড়ি সংলগ্ন বাড়ি ওয়ালা ফিরোজ মিয়াকে তার বাড়িতে যেন আর মাদক ব্যবসায়ীদের ভাড়া না দেওয়া হয়। এ ছাড়া গাজা ব্যবসায়ী ময়না মিয়া সিএনজি চালক এর বাড়িতে গিয়ে দেখেন দরজায় তালা দিয়ে পালিয়েছে এবং নজু বেপারীর বাড়ির ভাড়াটিয়া মাদক সাপ্লাই ও সেবনকারী সাগরকে উত্তম মাধ্যম দিয়ে হুশিয়ারী দেওয়া হয়।
একই সময় সুমন ও মনিরের বাড়িতে উপজেলার খিলপাড়া, ইছাপুরা, বয়রাগাদি ও কুসুমপুর থেকে মাদক নিতে আসা ৪/৫ জনকে কিছু উত্তম মাধ্যম ও কান ধরিয়ে উঠবস করিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়।
উচ্ছেদ অভিযানে ফ্রেন্ডস এসোসিয়েশেন অব মালখানগর এর সভাপতি হাজী আশরাফুজ্জামান সোহেলের নেতৃত্বে সাথে ছিলেন, মালখানগর ইউনিয়ন ২ নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য হযরত আলী খান, মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাজী ফিরোজ আহমেদ, কাজীরবাগ মহিলা মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য বিল্লাল খানসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, মো. জসিম উদ্দিন, হাজী শামিম হক, মো. রশিদ মিয়া, আক্তারুজ্জামান বাবু, শাহিন আহমেদ, আল আমিন ছৈয়াল, শিক্ষক আব্দুল্লাহ আল মামুন, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের সদস্য আওলাদ হোসেন, আবদুল হাই, রফিকুল ইসলাম রফি, জুয়েল খান, তপন, সাগর প্রমুখ।
এ সময় মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাজী ফিরোজ আহমেদ বলেন, এলাকায় মাদক, সন্ত্রাস, ইভটিজিং, জুয়া, নারী ব্যবসায় কেউ জরিত থাকলে, কোন প্রকার প্রমাণ পেলে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ শুধু দেখেই আসছি, আশানুরূপ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় নাই। তাই আমরা এলাকাবাসী প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে এবার মাঠে নেমেছি।
ইউপি সদস্য হযরত আলী খান জানান, বার বার বাঁধা দিয়েও কাজ হয়নাই, পুলিশ বহুবার মাদক ব্যবসায়ী সুমন ও মনির কে ধরে আদালতে পাঠায় আবার কয়েকদিন পর চলে আসে, এসেই আবার হেরোইন, ইয়াবা ও গাঁজা বিক্রি শুরু করে দেয়। তাদের অনেক লোক এ কাজে জড়িত, ছেলে মেয়ে স্ত্রী- সন্তান সবাই এ ব্যবসা করে। মালখানগর চৌরাস্তায় তারা মাদক পাড়া গড়ে তুলেছে। তাদের জন্য আমরা লজ্জায় মরি।
ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাজী আশরাজুজ্জামান সোহেল বলেন, দিন দিন মাদক ভাইরাস প্রত্যেক পরিবারে ছড়িয়ে পড়ছে, এর ভয়াবহতা ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরাই বুঝতে পারছেন। সামাজিক ও মানবিক উন্নয়নে আমরা কাজ করি। সেখানে সামাজিক অবক্ষয় ও নিষিদ্ধ ব্যবসা মাদক দিয়ে যুব সমাজ ধ্বংস করে ফেলছে। এই মাদকের কারণে আইন-শৃঙ্খলা অবনতি, চুরি ডাকাতি ছিনতাই ও খুন-খারাবি বৃদ্ধি পাঁচ্ছে। এদেরতো ফাঁসি দেওয়া উচিৎ, এত বড় অন্যায় কাজ করে বিভিন্ন পরিবার ও সমাজ এবং আগামী প্রজন্মকে ধ্বংশ করে দিচ্ছে, তাদের তো শাস্তির আওতায় আনা দরকার, পুলিশ ধরে নেয় আবার ২/৪ দিন পর ফিরে এসে যেই সেই। তাই আমরা গ্রামবাসী নানা শ্রেণি পেশার মানুষ এক হয়েছি। এই গ্রাম, এরপর ইউনিয়ন তার পর থানা এলাকায় আমরা ঐক্য হয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের নির্মূল ও প্রতিহত করতে যা দরকার তাই আমরা করবো।