বগুড়ার শেরপুর শহরের রামচন্দ্রপুরপাড়া বাশপট্টি মার্কেট এলাকায় আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা একটি মার্কেটের সামনে ১৪ এপ্রিল শুক্রবার রাতে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। এই নিয়ে যেকোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে দুই পক্ষই স্থান ত্যাগ করেন।
জানা যায়, শেরপুরের আওয়ামী লীগের রাজনীতি স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান ও বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও শেরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান মজনু দীর্ঘদিন ধরে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে রাজনীতি করছে। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তির দৌড়ে এগিয়ে থাকার জন্য দুই পক্ষের বিরোধ প্রকাশ্যে রুপ নিয়েছে।
সম্প্রতি সাংসদ গ্রুপের পক্ষে থাকা উপজেলা যুবলীগ শেরপুর শহরে একটি কার্যালয় তৈরির উদ্যোগ নেয়। এজন্য বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বিটিসিএল অফিসের পূর্ব প্রাচীর ঘেঁসে ঘর তৈরীর কাজ শুরু করে। রাতেই শেরপুর টাউন ক্লাব পাবলিক লাইব্রেরি মহিলা কলেজ কর্তৃপক্ষ জায়গাটি নিজের দাবি করে পুলিশের কাছে অভিযোগ করে। পুলিশ তৎক্ষনাৎ ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়। শুক্রবার সকালে যুবলীগ আবারও কাজ শুরু করতে চায়। এ সময় মজিবর রহমান মজনুর গ্রুপে থাকা ছাত্রলীগের একটি অংশ পাশেই উপজেলা পরিষদ চত্বরে জমায়েত হতে থাকে। পরে পুলিশ ঘর তৈরিতে বাধা দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এরপর থেকেই দিন ভর ফেসবুকে পক্ষে বিপক্ষে স্ট্যাটাস দিতে থাকে। সেখান থেকেই এই মুখোমুখি অবস্থানের পরিস্থিতি তৈরি হয়।
সরেজমিনে জানা যায়, শুক্রবার রাত ৯টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সারওয়ার রহমান মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক গোলাম হোসেনসহ ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী মুন ইরাফি মার্কেটের সামনে চা খেতে আসেন। এর কিছুক্ষণ পরে স্থানীয় সাংসদের ছেলে ও ধুনট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসিফ ইকবাল সনি, শেরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বদরুল ইসলাম পোদ্দার ববি, উপজেলা যুবলীগের সভাপতি তারিকুল ইসলাম তারেক ও মোস্তাফিজার রহমান ভুট্টোর নেতৃত্বে বেশ কিছু আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতা কর্মী একই মার্কেটের পূর্ব দিকের গেটে অবস্থান নেন। এরপর উভয় পক্ষের নেতা কর্মীরা সমবেত হয়ে মারমূখী অবস্থানে থাকে। খরব পেয়ে শেরপুর থানার পুলিশ এসে দুই পক্ষের মাঝখানে অবস্থান নেয়। তারা উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা করে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন। মাঝে বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের কারণে এলাকা অন্ধকারাচ্ছন্ন হলে ইট পাটকেল নিক্ষেপ হয়। এতে পৌর আওয়ামী লীগের ৬ নং ওয়ার্ড শাখার সদস্য আহসান হাবিব সুজন (৩৫) গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা করে রাত দেড়টার দিকে তাদেরকে সরিয়ে দেয়।
এ ব্যাপারে শেরপুর পৌর আওয়ামীলীগরে সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম হোসেন জানান, আমরা প্রতিদিনের মত মুনইরাফি গার্ডেন সিটির সামনে তারাবিহ নামাজ পর চা খেতে যাই। এর মধ্যে সংসদ সদস্যের ছেলে আসিফ ইকবাল সনি যুবলীগের নের্তৃবৃন্দদের সাথে সেখানে চা খেতে আসে। চা খাওয়া শেষে ওই স্থান ত্যাগ করা নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরে পুলিশ সদস্যরা এসে পিরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতেই বিদ্যুত চলে যায়। এ সময় তারা ইট পাটকেল ছুড়লে আহসান হাবিব সুজনের দাঁত ভেঙ্গে যায়। এ সময় উভয়ের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করে। পরে পুলিশের কথা মত রাত দেড়টার দিকে আমরা চলে যাই।
এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বদরুল ইসলাম পোদ্দার ববির দাবি বর্তমান আওয়ামী লীগের উপজেলা ও পৌর কমিটি অবৈধ। সম্প্রতি ছাত্রলীগের ঘোষিত কমিটিও অবৈধ। তাই আমরা তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছিলাম।
এ বিষয়ে শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আতাউর রহমান খোন্দকার বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। উভয় পক্ষের সাথে আলোচনা করে মার্কেটটি ফাঁকা করা হয়েছে। বর্তমানে এলাকার আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।