সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লাইভে ধর্মীয় বিষয়ে স্পর্শকাতর বক্তব্য দেওয়ায় শেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা জজ) ইমান আলী শেখকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। রোববার (১৬ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে পরামর্শ করে তাকে প্রত্যাহার আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়। গত শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) তার নিজের ফেসবুক হ্যান্ডেল থেকে লাইভে এসে বিচারক ইমান আলী ধর্মীয় স্পর্শকাতর বিষয়ে কথা বলেন। তিনি নবী-রাসূলগণের ওপর নাজিল হওয়া ওহী নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এছাড়াও বলেন, ‘আল্লাহ, ঈশ্বর, ভগবান সবই কৃত্তিম।’
বিচারক ইমান আলী শেখের এমন স্পর্শকাতর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে শনিবার (১৫ এপ্রিল) আইন ও বিচার বিভাগ, আইন মন্ত্রনালয় কর্তৃক প্রয়োজনীয় তদন্ত এবং বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তাকে মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে চিঠি দেওয়া হয়। এর প্রেক্ষিতেই রোববার প্রধান বিচারপতির চিঠিটি অনুমোদন করে বিচারক ইমান আলী শেখকে প্রত্যাহার করা হয়।
আইন মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ ওসমান হায়দার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসের সদস্য ইমান আলী শেখকে বদলি করে পুনরাদেশ না দেয়া পর্যন্ত আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হলো। তাকে শেরপুরের জেলা ও দায়রা জজের নিকট বর্তমান পদের দায়িত্বভার দিয়ে অবিলম্বে নতুন কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো। জনস্বার্থে এ আদেশ জারি করা হলো।
এদিকে, ধর্ম অবমাননাকর ওই মন্তব্যের কারণে ড. ইমান আলী শেখকে তাৎক্ষণিক বদলি করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শেরপুরে কর্মরত আইনজীবীরা। স্বস্তি ফিরে এসেছে স্থানীয় বিচার বিভাগেও।
ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট গোলাম কিবরিয়া বুলু বলেন, গত বছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শেরপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে যোগদান করেন ড. ইমান আলী শেখ। তিনি একজন ভাবুক ও ধ্যানী প্রকৃতির লেখক ও একজন গায়ক তিনি। ফেসবুক লাইভে তিনি খোদা, ইশ্বর, ভগবান সম্পর্কে বিভিন্নজনের মন্তব্যের মূল্যায়ন করেছেন। বিষয়টি খোদাভীরুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। এজন্য পরিস্থিতি বিবেচনায় তাকে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এমকে মুরাদুজ্জামান বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক ড. ইমান আলী শেখ তার ফেসবুক লাইভে নাস্তিকধর্মী কথাবার্তা বলায় স্থানীয়ভাবে পরিস্থিতি উত্যপ্ত হয়ে উঠার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। এজন্য বারের তরফ থেকে বিষয়টি জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ তৌফিক আজিজ এবং সিজেএম এসএম হুমায়ুন কবীরকে জানানো হলে তারা দ্রুত বিষয়টি আইন সচিব ও সুপ্রিম কোর্ট বিভাগে অবহিত করেন। সে প্রেক্ষিতে তাকে প্রত্যাহার করায় স্থানীয়ভাবে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এজন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানিয়ে বিভাগীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে তার অপসারণ দাবি জানান।